Search This Blog

Friday, October 9, 2015

কুড়িগ্রাম আর একটু কুড়িগ্রাম হয়ে উঠুক…

                                             কুড়িগ্রাম আর একটু কুড়িগ্রাম হয়ে উঠুক…
                                   ARIFUZZAMAN ARIF·FRIDAY, OCTOBER 9, 2015
সত্য কথাই তেঁতো আর অসুন্দর সদা অসত্য, অন্যায়। শ্যাখ সাহেবের বেটি আসছেন এ শহরে, সাজ সাজ রব চারিদিকে, অসমান রাস্তা সমান হলো, যে রাস্তায় শুভ্র শরতের ধূলো উড়তো সকাল বিকেল, সে রাজপথ বিটুমিনাসের তীব্র ঝাঝালো গন্ধের দখলে। তেলের খনির ইজারা দেয়া হয়েছে ডাইরক্যা পুটিদের, যাদেরকে লুঙ্গির উপর জাঙ্গিয়া কিংবা শার্টের উপর স্যন্ডোগ্যঞ্জি পড়তে দেখা যেতো হরহামেশাই। রং বে-রংয়ের ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ড এর ব্যবসা জমজমাট। জাখলা সাহেব নৌকা বানাতে দিব্যি হম্বিদম্বি অবস্থা, এই রাজস্ব-ঐ- জেলারেল কর্মকর্তা বলছেন না না আর একটু বৈঠাটা বড় করলে ভাল লাগবে, হাজার হোক একটা মহাপ্লাবন হতে যাচ্ছে তো এই শহরে। মাথার উপর দু-একবার হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যাচ্ছে।চার স্তরের সিপাহশালারা উপস্থিত যদি কোন পিঁপড়ে বা উঁইপোকা আবার নৌকার তলায় ফুটো করে। যে খেলার মাঠ গরু-ছাগলের দখলে ছিল তা এখন লাল ফাস্টক্লাস ইটের প্রলেপে ঢাকা। যে ফুটপাত নিম্নবিত্তের নিউমার্কেট ছিল তা এখন চুনোপুটিদের তোড়নের ভারে ২.৫ ইঞ্চি দেবে গ্যাছে। শ্যওলা ধরা পুকুর পাড়ে এখন ফাস্টফুডের দোকান বসেছে। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাড়িঁয়ে থাকা অট্টালিকা গুলো এখন রুচিশীল মনের বার্জার প্লাস্টিক পেইন্ট দিয়ে ঢেকে দেয়া হচ্ছে। দলের পেছরের সারিতে থাকা নেতারা এখন গিজগিজ করছে নৌকার আসেপাশে। আজ বিকেলে এই সব অভিজ্ঞতা নিয়ে বাসায় এসেই ভাবনার খাতায় বেখেয়ালী কলম চালালো ছেলেটা। কিছু প্রশ্ন বার বার ধোঁয়া তুলছিল ছেলেটার মস্তিষ্কে। আসলে কি এই? নাহ! শুধুমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় যেদিক দিয়ে তার গাড়ি বহর নিয়ে যাবেন সেইটুকু অংশই এরকম চাকচিক্যময় করে তোলা হয়েছে। তাহলে তিনি কি দেখবেন? এ অঞ্চলের মানুষের কমতি কিসের? রাস্তাঘাট তো বেশ ভালই আছে নাকি? তাহলে কিসের আবার দাবি দাওয়া? কুড়িগ্রামের আসল অবস্থা গুলো প্রধানমন্ত্রী জানেন? নাগেশ্বরী-ভুঃঙ্গামারী সড়কের বেহাল দশার কথা জানেন? ভাঙনের ফলে চরাঞ্চলের জীবন জীবিকার কথা জনেন? বেকারদের মনের কথা জানেন? এইটুকু লিখেই ঘুমোতে গেল ছেলেটা। অত:পর ঘুমের মধ্যে একখানা মাইথলজিক্যাল ড্রিম দেখলো ছেলেটা।
“একদা এক দেবদূত এক নগরীর উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল, সহসা তিনি কি মনে করে জানি তার বাহন থামিয়ে নেমে আসলেন নগরীতে। নগরীর খেটে খাওয়াদের দল, ইট ভাঙা মাথার দল, পেপার বিক্রেতার দল, ভীক্ষুকের দল, এতীম অনাথের দল, পুষ্টিহীনদের দল, নদী ভাঙাদের দল, দ্বীপ চরের দল, বন্যার্তদের দল, ফসলহারা কৃষকদের দল, রিক্সাওয়ালাদের দল, ভুক্তভোগীদের দল, বেকারদের দল, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দল, কয়লা ব্যবসায়ীদের দল, বালুশ্রমিকের দল, শিক্ষিত বেকারদের দল সেই সাথে কাক পক্ষির দলও প্রত্যেকেই তাদের মনের কথা গুলো দেবদূতকে বললো। দেবদূতের মনে গভীর দয়ার উদ্রেগ হলো, তিনি নগরীর দূরাবস্থার কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে বর দিলেন:
নগরীর কেন্দ্রে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নগরী থেকে দূরে দুর্গম চরাঞ্চলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার ভবন, বিচারালয়, রেল যোগাযোগ, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্র, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি। দরদী দেবদূত এই সকল উপহার দিয়ে নগরবাসীর কাছ থেকে বিদায় নিলেন”।
ছেলেটা সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার সময় দেখল মোটর বাইকে তেল নেই। অগত্যায় রিক্সায় উঠে জনৈক ব্যক্তির কন্ঠে “মাজে মইধ্যে এ্যংকরি দুই একজন করি নেতা-কোতা আইসলে তো ভালই হইল হয়, আর যাই হোক রাস্তাঘাট গুল্যা ভালই হয়্যা গেইল বাহে এলা” শুনতে শুনতে অফিসের দিকে চলে গেলো। জয় হোক স্বপ্নের, সফল হোক জননেত্রীর আগমন।

আজ ঈদ, নগরীর ঘরে ঘরে আতংক!

       আজ ঈদ, নগরীর ঘরে ঘরে আতংক!
                                               ARIFUZZAMAN ARIF·SATURDAY, OCTOBER 10, 2015

“আজ ঈদ মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দ। পথে পথে শিশুদের কলোরব। দলে দলে লোকজন ঈদগাহে যাচ্ছে। তাদের গায়ে নানান রংয়ের পোষাক। বাতাসে আঁতোরের গন্ধ…………..” বাল্যকালের স্মৃতির পুকুরে ডুব দিয়ে দেখুন না, প্রায় সবাই এই লেখাটি পড়েছিলাম প্রাথমিকের প্রথম শ্রেনীর “আমার বই” নামক বইয়ে। শাওয়ালের প্রথম আকাশের কোণে যখন হাসি মাথা বাঁকা চাঁদ খানা দেখা দিতো তখন হৈ হুল্লোর করে এ বাড়ী ও বাড়ী বলে বেড়াতাম “চাঁদ উঠেছে, চাঁদ উঠেছে”। মা-চাচী রা চেঁচামেচী শুনে বাইরে বেরিয়ে আসতো, তখন রেডিওতে খুব জোরে সাউন্ড দিয়ে ভাইয়া গান শোনাতে আহ্বান করতো “ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ.............”। মায়েরা ব্যস্ত হয়ে পরতেন পিঠা, পায়েশ, স্যমাই রান্না ইত্যাদি আরো কতো কি...!!!! মদিনার সেই আনন্দ লেগে যেতো প্রতি পাড়ায় পাড়ায়। এ ঘর ও ঘর বেড়ানো , রাত জেগে ভোরের প্রত্যাশায় কান খাড়া থাকতো। কখন যে ভোরের আজান হবে আর কার আগে কে গোসল করবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা লেগেই থাকতো। আগে গোসল করতে পারলে সোওয়াব অনেক। কতোবার যে প্রথম হয়েছি, আবার কখনো প্রথম হতে গিয়ে অন্যের ঘারে লাফিয়ে পরেছিলাম পুকুরে তার হিসেব নেই।
কুড়িগ্রামের ঘরে ঘরে ঈদ। এবার মুহররম মাসের ১ তারিখে কুড়িগ্রাম শহরে একটি অন্যরকম ঈদ উদযাপন হতে যাচ্ছে। আজ কাল পরশু এভাবে ক্ষণ গনণা শুরু হয়েছে। পথে পথে নেতাদের কলোরব। দলে দলে লোকজন বলাবলি করছে। তাদের গায়ে শার্টের উপর স্যান্ডোগেঞ্জি, লুঙ্গির উপর আন্ডার অ্যয়ার। বাতাসে প্রেট্রোলের গন্ধ..........শহরের প্রাণ কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে নানান রংয়ের পোস্টার, ঝারবাতি ‍ইত্যাদি। মাইকে জোরে জোরে বাজানো হচ্ছে “..... ময়দানের জনসভায় যোগ দিন, যোগ দিন”। ছোট-বড়-হালকা-ভারী-মাঝারি-নেতারা বিভিন্ন ধরনের সংকুচিত-বর্ধিত সভার ব্যস্তদিন কাটাচ্ছে। কে কার আগে তোড়ন বসায়, কার তোড়ন হেলানো দোলানো নকশা করা, কার ছবি ভাল হয়েছে ইত্যাদি।
কিন্তু “দি উচ্ছেদ পান স্টোর” নামক পান বিক্রেতার ঘুম হারাম। তার এই ঈদ কোন ভাবেই তার ঘরে পৌছাচ্ছে না। করন দেশনেত্রী শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) আগমন উপলক্ষে কুড়িগ্রাম শহরের সাজ সাঝ ভাব থাকলেও এই মহানন্দক্ষণে তাদের দোকান-পাট, ব্যবসাপাতি, হোটেল-মোটেল, এখন বুলডোজার নামক স্যামাই খেয়ে ফেলেছে। খুশি ভাগাভাগি তো দুরের কথা, আজ রাতে তার ঘরে ভাতের হাড়ি উঠবে কিনা তা জানা নেই আমাদের। এই শহরের অধিকাংশ লোকই অতিদরিদ্রসীমার নিচে বাস করে । অভাবী নাগরিকদের কেউ কেউ রাস্তার দুপাশে পরে থাকা পতিত জমি ব্যবহার করে দোকানপত্র নিয়ে বসে দু-চার পয়শা কামাই রোজগার করে খায় বটে। কিন্তু আমাদের তা আর চোখে সইল না। নেত্রী যে রাস্তা দিয়ে যাবেন তার উভয় দিকের অবৈধ স্থাপনা সহ সকল স্থানের অবৈধ স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আগামী কাল আবার নতুন কোন অবৈধ স্থাপনা ভাঙা হবে। এভাবে অভিযান অব্যহত থাকবে। সুতরাং শহরের কিছু কিছু নাগরিকের মনে ঈদ ঈদ ভাব থাকলেও ঐসব উচ্ছেদ নামক পানবিক্রেতার মনে ঈদ পূর্বমুহূর্ত আনন্দ নয় আতংক!
তার পরও শেখ হাসিনার আগমন, শুভ বার্তা বয়ে নিয়ে আসুক কুড়িগ্রাম বাসীর। জয় বাংলা।
ছবিঃ KGM নাহিদ।

অনেকটা নিরবেই চলে গেলেন...

গীতিকার নায়ীম গহর আর নেই আমাদের মাঝে

‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’, ‘নোঙ্গর তোলো তোলো সময় যে হলো হলো’, ‘পূবের ঐ আকাশে সূর্য উঠেছে’ -এর মতো সাড়া জাগানো গানের গীতিকার নয়ীম গহর আর নেই। মঙ্গলবার রাত সোয়া একটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় আক্রান্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। স্বাধীনতা পদকপ্রপ্ত কালজয়ী এই গীতিকার অনেক দেশাত্মাবোধক গান লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় লিখিত তার গানগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলো। গান লেখার পাশাপাশি একজন ঔপন্যাসিক, গায়ক, অভিনেতা ও নাট্য রচয়িতা ছিলেন তিনি। বিবিসি বাংলার ভাষ্যকার ও সংবাদ পাঠক হিসেবে কাজ করেছেন। গীতিকবি নয়ীম গহরকে ২০১২ সালে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। নয়ীম গহরের মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

বিড় বিড় করে বলা অনুগল্পগুলো

বিড় বিড় করে বলা অনুগল্পগুলো
মনে মনে জিয়ে রাখা অনুগল্পগুলো
অনুগল্প - ০১ আমার ছোটবেলায় এরকম হতো, হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গার পর খানিক সময় লাগতো যে, এখন কোথায় আছি? স্কুল জীবনে কোন কঠিন পরীক্ষার আগের রাতে মোটামুটি কম ঘুম হতো, হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গার পর ভোর রাতে জেগে উঠেই দেখতাম কিছ্ছুই মনে নেই। মেসে থেকে পড়াশুনা করতে হয়েছিল বলে কলেজ ছুটিতে গ্রামে ফিরলে হঠাৎ মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গার পর মনে হতো বুয়া ডাকছে, সময় লাগতো নিজেকে ফেরাতে যে, আমি কলেজে না বাড়ীতে আছি। গত শুক্রবার সকালে উঠে বেশ গম্ভীর ভাবে হাটাহাটি করে দাঁতব্রাশ করার সময় চোখ পরলো পত্রিকা স্ট্যানে। হকার সবে মাত্র পত্রিকা দিয়ে গেছে, কেউ এখনো ভাঁজ খোলেনি। প্রথম আলো। চিত্রসমেত শিরোনাম দেখে আঁতকে উঠলাম “ওমা একি? গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে আছি?” মদ্যপ অবস্থায় শিশুকে গালি ও গুলি করলো সয়ং সাংসদ!!! ০৩/১০/২০১৫খ্রি:
অনুগল্প - ০২ কয়েকদিন আগে গণমাধ্যমে দেখলাম শয়তান কে ঢিল ছুড়তে গিয়ে, মিনায় বহু হাজীর প্রাণ গেলো !!! তবে কি শয়তান………………!? (৫৭ ধারায় মামলা হতে পারে তাই শুণ্যস্থানে কিছু লিখলাম না) ০১/১০/২০১৫খ্রি:
অনুগল্প - ০৩ অফিসে চোখে পড়ার মত লম্বা চওড়া বস। স্বাস্থে মাশাল্লাহ বোয়াল ভোজী। তাঁর বিরুদ্ধে বলার সাহস নেই কারো। বস তো এরকমই হয়। কোন সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হই বা না হই, কোন গুনাগুন করি বা না করি বসের বিদায়ে বলতে শুনি “আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আমাদের বসের মতো ভাল বস আর কোথাও পাবেন না, ইনিই আমাদের দেখা শ্রেষ্ঠ বস”(বক্তব্যের শুরু ও শেষ একই থাকে)

Friday, July 31, 2015

জরায়ুতে বুলেট ! ও অংশীদারী ভূ-খন্ড অধ্যয়ন

জরায়ুতেই থাকতে নাম না জানা শিশু যখন বুলেটের আঘাতে হাসপাতালের আই.সি.ইউ তে তখন একটি আশা জাগানিয়া খবর শুনতে পেলাম আজ রাত ১২:০১মি থেকে বাংলাদেশের দ্বীপায়ণিক রাজ্যে(ছিটমহলের আভিধানিক অর্থ)স্বাধীন সাবর্ভৌম স্বীকৃতির পতাকা উড়বে। জানা যায়, ষোড়শ শতাব্দীতে মোঘল সেনাপতি মীরজুমলা কোচবিহার রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন। এ সময় কোচ রাজা মোঘলদের বশ্যতা স্বীকার করে “কারদ” রাজ্যে পরিনত হয়। সে সময় মোঘল অধিকৃত ১১১টি এলাকার অধিবাসী কোচ রাজার বশ্যতা স্বীকার করে তার রাজ্যের প্রজা হিসেবে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করে ও তার রাজ্যভুক্ত হয়। তখন তাদের বলা হতো রাজগীর। তখন থেকে ঐ এলাকার অধিবাসীগণ রাজগির নামে পরিচিতি লাভ করে। অনুরুপভাবে কোচ রাজ্যভুক্ত ৫৩টি (বর্তমান দহগ্রাম আঙ্গোপোতাসহ) এলাকার অধিবাসী মোঘলদের বশ্যতা স্বীকার করে তাদের অধিকৃত অঞ্চলে সম্পৃক্ত থাকার ইচ্ছা পোষণ করে তারাও ঐ রাজ্যভুক্ত থেকে যায়। ১৯৪৭সালে বাংলা-পাঞ্জাবের সীমারেখা টানার পরিকল্পনা করেন লর্ড মাউন্টবেটন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিটিশ আইরজীবী সিরিল রেডক্লিফকে প্রধান করে সে বছর গঠন করা হয় সীমানা নির্বাচন কমিশন। ১৯৪৭সালে ৮জুলাই লন্ডন থেকে ভারতে আসেন রেডক্লিফ। মাত্র ০৬ সপ্তাহের মাথায় ১৩আগষ্ট তিনি সীমানা নির্ধারনের চুড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এর মাত্র ৩দিন পরেই ১৬আগষ্ট জনসম্মুখে প্রকাশ পায় সীমানার মানচিত্র। কোন রকম সু-বিবেচনা ছাড়াই কমিশনের সদস্যদের নিস্ক্রিয়তা, জমিদার-নবাব, স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও চা বাগান মালিকদের প্রভাবে এধরনের দ্রুত সিদ্ধান্তের জন্য সীমানারেখা নির্ধারণের জটিলতা উত্তরাধিকার সুত্রে বয়ে বেড়াতে হলো যুগের পর যুগ। ইতিহাসের বিবর্তনে উপমহাদেশের বিভক্তি ঘটে। ভারত ও পাকিস্তানের (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান) মানচিত্র তৈরি হয়। ১৯৪৭সালে ১৫আগষ্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করলেও কোচবিহার রাজ্য তাতে অর্ন্তভুক্ত হয়নি। কোচবিহার ছিল রাজ্য শাসিত পৃথক রাজ্য। ১৯৪৯ সালের ১২সেপ্টেম্বর কোচবিহারের রাজা জহদ্বিপেন্দ্র নারায়ণ কোচবিহারকে ভারতের রাষ্ট্রের সঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করে একটি চুক্তি করেন। ১৯৫০সালের ১জানুয়ারী কোচবিহারকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দেরীতে যুক্ত হওয়ায় দেখা গেল কোচ রাজার জমিদারির একাংশ রয়ে গেল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, বিপরীতে পূর্ব পাকিস্তানের কিছু জমিদারদের ভূ-সম্পত্তির কিয়দংশ রয়ে গেলো ভারতের কোচবিহার নামক জেলাতে। এভাবেই জন্ম হলো ছিটমহল নামক বিচিত্র ভূ-খন্ডের।
যা বলতে চেয়েছিলাম, একটি রাষ্ট্রের অংশীদার হয়েও নাগরিকত্ব(গত কাল ৩০জুলাই ২০১৫তে, ৯৪৯জন নিজের ইচ্ছায় ভারতের অধীনে চলে গেছেন ভাগ্য ফেরাতে) পেতে যেখানে ৬৮ বছর লাগলো? স্বাধীকার প্রশ্নকে দুরাতীত মনে হয় এজন্য যে, হয়তো আজ রাত ১২টায় বাজি পুরিয়ে, র‌্যালি করে কিংবা ঘরে ঘরে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে নিজেদের স্ব-অধীনতার বাক্য উচ্চারণ করবে ছিটমহলবাসী। কিন্ত যখন দেখবে আজই এদেশে অতি রাজনৈতিকতার শিকার হয়ে একটি নবজাতক যে কিনা পৃথিবী নামক গ্রহে আসার আগেই মায়ের জরায়ুতেই বুলেটের আঘাতে অপ্রত্যশিত সময়ে ভূমিষ্ট হয়ে ১৭ কোটি মানুষে অভিশাপ দিচ্ছে, সেই দেশের নাগরিক হতে পেরে ৬৮বছর বন্দিত্ব ফেরৎ এই মানুষগুলোর ভাগ্যোন্নয়নে কতোটুকু আর্শীবাদ বয়ে আনবে ৪৪ বছরের পরিনত যুবক বাংলাদেশ? 

তথ্যসুত্র: ব্যবচ্ছেদ এর ৪৫-৪৭পৃষ্ঠা

জরায়ুতেও বুলেট ও ‍দ্বিতীয় ভূ-খন্ডের ‍উত্থান

Rivqy‡ZB _vK‡Z bvg bv Rvbv wkï hLb ey‡j‡U AvNv‡Z nvmcvZv‡ji AvB wm BD †Z ZLb GKwU Avkv RvMvwbqv Lei ïb‡Z †cjvg AvR ivZ 12:01wg. †_‡K evsjv‡`‡ki ØxcvqwbK iv‡R¨ (wQUgn‡ji AvweavwbK A_©) ¯^vaxb mve©‡fŠg ¯^xK…wZi cZvKv Do‡e| Rvbv hvq †lvok kZvãx‡Z †gvNj †mbvcwZ gxiRygjv †KvPwenvi ivR¨ AvµgY K‡iwQ‡jb| G mgq †KvP ivRv †gvNj‡`i ek¨Zv ¯^xKvi K‡i ÒKvi`Ó ivR¨ cwibZ nq| †m mgq  †gvNj AwaK…Z 111wU GjvKvi  Awaevmx †KvP ivRvi ek¨Zv ¯^xKvi K‡i Zvi iv‡R¨i cÖRv wn‡m‡e _vKvi B”Qv cÖKvk K‡i I Zvi ivR¨fz³ nq| ZLb Zv‡`i ejv n‡Zv ivRMxi| ZLb †_‡K H GjvKvi AwaevmxMY ivRwMi bv‡g cwiwPwZ jvf K‡i|

Abyiƒc fv‡e †KvP ivR¨fz³ 53(eZ©gvb `nMÖvg Av‡½vi‡cvZv mn) GjvKvi Awaevmx †gvNj‡`i ek¨Zv ¯^xKvi K‡i Zv‡`i AwaK…Z A‡j m¤ú„³ _vKvi B”Qv †cvlY K‡i ZvivI H ivR¨fz³ †_‡K hvq| 1947mv‡j evsjv-cvÄv‡ei mxgv‡iLv Uvbvi cwiKíbv K‡ib jW© gvD›U‡eUb| Zvi cwiKíbv Abyhvqx weªwUk AvBbRxex wmwij †iWwK¬d‡K cÖavb K‡i †m eQiB MVb Kiv nq mxgvbv wbev©Pb Kwgkb| 1947mv‡ji 8 RyjvB jÛb †_‡K fvi‡Z Av‡mb †iWwK¬d| gvÎ 06mßv‡ni gv_vq 13AvM÷ wZwb mxgvbv wbav©i‡Yi PzovšÍ cÖwZ‡e`b †`b| Gi 03w`b ciB 16 AvM÷ Rbm¤§y‡L cÖKvk cvq mxgvbvi gvbwPÎ| †Kvb iKg my-we‡ePbv QvovB  Kwgk‡bi m`m¨‡`i wbw¯ŒqZv, Rwg`vi beve-¯’vbxq ivRbxwZwe` I Pv evMvb gvwjK‡`i cÖfv‡e Gai‡bi `ªæZ wm܇šÍi Rb¨ mxgv‡iLv wbav©i‡Yi RwUjZv DËivwaKvi my‡Î Avgv‡`‡K e‡q †eov‡Z n‡jv hy‡Mi ci hyM|

BwZnvm weeZ©‡b Dcgnv‡`‡ki wefw³ N‡U| fviZ I cvwK¯Ív‡bi(c~e© I cwðg) gvbwPÎ ˆZwi nq| 1947mv‡j 15 AvM÷ fviZ ¯^vaxbZv jvf Ki‡jI †KvPwenvi ivR¨ Zv‡Z AšÍf©~³ nqwb| †KvPwenvi wQj ivR¨kvwmZ c„_K ivR¨| 1949mv‡ji 12 †m‡Þ¤^i †KvPwenv‡ii ivRv RMØx‡c›`ª bvivqY †KvPwenvi‡K fvi‡Zi iv‡óªi m‡½ AšÍf~³ K‡i GKwU Pzw³ K‡ib| 1950mv‡j 1 Rvbyqvix †KvPwenvi‡K fvi‡Zi cwðge‡½i GKwU †Rjv wn‡m‡e †NvlYv Kiv nq| †`wi‡Z hy³ nIqvq †`Lv †Mj †KvP ivRvi Rwg`vwii GKvsk i‡q †Mj ZrKvjxb c~e© cvwK¯Ív‡b(Avgv‡`i evsjv‡`k)| Avevi wecixZ fv‡e c~e© cvwK¯Ív‡bi wKQz Rwg`vi †`i fzm¤úwËi GKUv Ask i‡q †M‡jv fvi‡Zi ‡KvPwenvi bvgK †Rjv‡Z| Gfv‡eB m„wó n‡jv wQUgnj bvgK wewPÎ wKQz f~-L‡Ûi|


ev¯ÍeZv n‡jv GKwU †`‡ki Askx`vi n‡qI hv‡`i bvMwiKZ¡ †c‡Z 68 eQi jvM‡jv †m †`‡ki ¯^vaxbZv bvgK kãwU eoB ‡e-gvbvb jv‡M G Rb¨ †h- AvR nq‡Zv evwR cywo‡q, i¨vwj K‡i wKsev N‡i N‡i cZvKv Dwo‡q wb‡R‡`i ¯^vaxbZvi ¯^xK…wZi Rvbvb †`‡e H wQUgnj evmx wKš‘ †h †`‡k `yóivRbxwZi wkKvi n‡q GKwU beRvZK †h wKbv c„w_ex bvgK MÖ‡ni Avmvi Av‡MB gv‡qi Rivqy‡ZB A‡¯¿i AvNv‡Z AvnZ n‡q fzwg÷ n‡jv Ges Rxeb g„Z¨yi mwÜÿ‡Y `vwo‡q Avgv‡`i 17‡KvwU gvbyl‡K Awfkvc w`‡”Q, †mB †`‡ki bvMwiK n‡Z †c‡i 68eQi ew›`Z¡ †diZ GB wQUgnj evmxi fv‡M¨vbœq‡bi K‡Zv UzKz f~wgKv ivL‡e Avgv‡`i GB 44 eQ‡ii hyeK evsjv‡`k|                                                  
                                                                                                                    Z_¨ msMÖn: e¨e‡”Q`|

Thursday, July 23, 2015

আমরা বাঙালীরা ক্যাজুয়্যাল বর্ণবাদী !

বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম গত এক বছর ধরে অভাবনীয় সাফল্যের সাথে খেলে নিজেদেরকে বিশ্বের প্রথম সারির একটা দলে পরিণত করেছে। সাফল্যের পথ বেয়ে আসে নানা অবাঞ্চিত জঞ্জাল, আত্মঅহমিকার তোড়ে অনেক সময় সরে যায় মানবিকতার মুখোশ, আর বেরিয়ে আসে আমাদের আসল চরিত্র। বাংলাদেশ বনাম সাউথ আফ্রিকার মধ্যকার প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের মধ্যাহ্ন বিরতিতে কিছু দর্শক ডেল স্টেইনকে মৌখিক অপমান করার পাশাপাশি তার গায়ে মার্বেল ছুড়ে মেরেছে। বিপক্ষের এক জন খেলোয়াড়ের সাথে এমন আচরণ ভব্যতার সব মাপকাঠিই ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশি দর্শকেরা এখানেই থেমে যায়নি, তারা ডেল স্টেইনের সংগী একজন "কৃষ্ণাংগ" খেলোয়াড়কে উদ্দেশ্য করে বর্ণবাদী মন্তব্য করেছে, যার মধ্যে আছে N আদ্যাক্ষরের অপমানসূচক শব্দ। দক্ষিণ আফ্রিকা দল এর প্রতিবাদ জানিয়েছে, ম্যাচ রেফারি আরেক বার এমন ঘটনা ঘটলে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন।
আমাদের বর্ণবাদ শুধু বিদেশীদের উদ্দেশ্যেই তা কিন্তু নয়। আমরা নিজ পরিবারের তুলনামূলক গাঢ় বর্ণের সদস্যটিকে সরাসরি কিংবা নানা রূপকের আশ্রয় নিয়ে অপমান করি। আমাদের মা বাবা সন্তানের গাত্রবর্ণের লজ্জা ঢাকতে “উজ্জ্বল শ্যামলা”’র মত ছদ্মবেশী শব্দের ব্যবহারে বাধ্য হোন। গায়ের রঙের গাঢ়ত্বের জন্য আমাদের সমাজে অনেককে পিছিয়ে পড়তে হয় শিক্ষা, চাকুরী, বিয়ে জীবনের প্রতিটা পর্যায়ে। আমরা নানা জেলার লোকেদের সম্পর্কে একগাঁদা স্টেরিওটাইপ দাঁড় করিয়ে রেখে, তাদের সাথে মেলামেশায় সেটা প্রয়োগ করি। ছোট্ট একটা বদ্বীপে বাস করে এক জেলার লোক অন্য জেলার লোকের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতে চাই না, অন্যরা আমাদের মত যথেষ্ট ভালো না বলে।
আমি জানি না অন্যদের অভিজ্ঞতায় কী বলে, কিন্তু নিজ দেশবাসীদের সাথে আমার অভিজ্ঞতা যা হয়েছে, তা থেকে বলতে পারি, আমাদের মাঝে বর্ণবাদ মোটেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। কেউ সচেতনে, কেউ অচেতনে বর্ণবাদী আচরণ করে। আমরা অনেকে জানি না যে শব্দেরও রাজনীতি আছে, ইতিহাস আছে। অনেকে আমাদের “ক্যাজুয়াল” বর্ণবাদী মন্তব্যে অন্যে কতটা আঘাত পাবে সেটা চিন্তা করতেই অপারগ। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূত্রে ভিতরের অন্ধকার যখন বেরিয়েই এসেছে, আমাদের উচিত এ নিয়ে খোলামেলা কথা বলা। আমাদের উচিত নিজেদের অন্ধকারের মোকাবেলা করে নিজেকে ভালোমত চেনা। বর্ণবাদ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা হওয়া খুবই জরুরী। মানুষকে সচেতন হতে হবে যে গায়ের রঙের উপর নির্ভর করে একটা মানুষ আলাদা হয়ে যায় না। তাদেরকে জানাতে হবে কোন ধরনের আচরণ বর্ণবাদী। জানতে হবে অতীতের বর্ণবাদ কীভাবে মানবসমাজের একটা বড় অংশকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষ হিসাবে প্রাপ্য সব অধিকার বর্জন করে জীবন কাটিয়ে দিতে হয়েছে। প্রাসঙ্গিক জ্ঞান থেকেই আসবে নিজের থেকে আলাদা দেখতে মানুষের প্রতি সহমর্মিতা।
মিডিয়াগুলোর উচিত যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে এই ঘটনার প্রচার করা। ভেতরের পাতায় ছোট করে এ সংবাদ ছাপিয়ে দেশের সংবাদপত্র তাদের দায় মিটিয়ে ফেলতে পারে না। বিসিবির প্রতি দাবী জানাই তারা যেন এ ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করে দর্শকদের জন্য একটা গাইডলাইন তৈরী এবং সেটা প্রয়োগ করে। আন্তর্জাতিক নানা ক্ষেত্রেতো আমাদের ভুগতে হবেই, স্বদেশীদের প্রতিও আমরা দিন দিন আরো নির্দয় হয়ে দেখা দিব। বর্ণবাদ আমাদের দেশে শৈশবে নয়, বরং কৈশোরকাল অতিক্রম করছে। সেটা এখনি দূর করব কিনা এই সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে আমরা ভবিষ্যতের আমাদেরকে মানবতা থেকে কত দূরে রেখে গড়ে তুলব।
হিউমিনিটির ক্র্যাডল আফ্রিকা থেকে নানা সময়ে, নানা পথে মাইগ্রেট করে মানুষ পৌঁছেছে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ আর অ্যামেরিকাতে। হাজার হাজার বছর স্থায়ী এইসব মাইগ্রেশনে মানুষের নানা গোষ্ঠীকে অভিযোজিত হতে হয়েছে সূর্যের ভিন্ন পরিমাণ আলোর নীচে (আরো সঠিকভাবে বিভিন্ন পরিমাণ অতিবেগুনী রশ্মির উপস্থিতিতে )। আফ্রিকার গনগনে সূর্যের নীচে অভিযোজিত হওয়া মানুষের ত্বকে অতিবেগুনী রশ্মিকে ঠেকানোর জন্য দায়ী মেলানিনের প্রাচুর্য্য, আবার বছরের বড় সময় ধরে বিরল সূর্যের নীচে অভিযোজিত হওয়া ককেশিয়ানদের ত্বকে মেলানিনের স্বল্পতা যেন তারা যথেষ্ট পরিমাণ সূর্যোলোক পেতে পারে। মাঝারি সূর্যের নীচে অভিযোজিত হওয়া মানবগোষ্ঠীর গায়ের ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ মাঝারি। মেলানিনের পরিমাণ গায়ের রঙ্গের গাঢ়ত্বের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। আর তাই আফ্রিকার লোক কৃষ্ণাংগ, ককেসিয়ানরা শ্বেতাংগ। আর এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ইত্যাদি জায়গার লোকেদের গায়ের রঙ “বাদামী” থেকে “হলুদ”। গায়ের রঙ বিবর্তনের লম্বা ইতিহাসে, মানব শরীরের নিরাপত্তায় গড় উঠা অতি বেগুনী রশ্মি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটা বাইপ্রোডাক্ট মাত্র। মানুষের অর্জন কিংবা তার অন্তর্নিহিত মনুষত্বের কোন পরিমাপক এটা নয়।

প্রাণিবিদ্যার পুন:রাবিষ্কার

প্রাণিবিদ্যার  পুণ:রাবিষ্কার
আমাদের গ্রহের অন্যান্য প্রানী বিশেষ করে স্তন্যপায়ী থেকে মানুষ একটু আলাদা একটি মাত্র কারনে। এছাড়া অন্য যেকোন প্রানী থেকে তাকে সহজে আলাদা করা যায় না। অন্যান্য সকল প্রাইমেটদের মতোই আমাদের হাত, পা, মুষ্ঠিবদ্ধ করার ক্ষমতা, লোমাবৃত দেহ কাঠামো, ভ্রুণের পরিষ্ফুটন,কাম, প্রেম, সংসার, সন্তান জন্ম, বার্ধক্য, মৃত্যু ইত্যাদি প্রায় কাছাকাছি ভাবে মিলে যায়। কিন্তু একটি জায়গায় বিস্তর ফারাক, তা হলো অন্য সকল স্তন্যপায়ীরা সন্তান জন্মদেয় এবং অপত্য লালন করে থাকে এবং তাদের শিশু বড় হলে স্বাধীন ভাবে নাওয়া- খাওয়া করতে পারে। ঠিক একই ভাবে মানুষের বেলাও তাই ঘটে। কিন্তু সন্তান বড় হলে কেবল মানুষ্য প্রজাতীই তাদের পিতা-মাতাকে তাঁদের বার্ধক্যকালে নিজ সন্তানের মতো লালন পালন করে যা অন্য কোন স্তন্যপায়ী/ প্রাইমেট দের বেলায় দেখা যায় না। অন্য সকল প্রজাতীই তাদের সন্তানদের কাছ থেকে তেমনটি পায় না যা মানুষ্য নামক প্রানী পেয়ে থাকে। বিষয়টি আমার কাছে পুণ:রাবিষ্কারের মতোই লাগলো বলে শেয়ার করলাম!

Wednesday, July 15, 2015

সংশোধনাগার

যে কবিতা রওনা হয়েছিল তোমার পানে
ওখানে আমার কিছু সংশোধনের ছিল

যে কবিতাগুচ্ছ লেখা হয়েছিল তোমায় নিয়ে
সেগুলো পড়া হবেনা কোনদিন নিজেকে দিয়ে
তার একটা সম্পূর্ণ শব্দও যেন কেউ পড়তে না পারে

যেখানে বলার বিষয় কম সেখানেই কথা হয় বেশি
বলার মত লিখলে একটি বাক্যেই রাশি রাশি
কথা ফলাতে পারে
অন্যদিকে বলার মত কথাতো একবাক্যের।
সংশোধন অযোগ্য!

অক্ষরহীন কবিতার নীল শার্ট তুমিই আমাকে পরিয়েছ
তার শব্দগুলো সুগন্ধ হারিয়ে আজ বিবর্ণ হয়ে
তেলাপোকার দখলে অন্যকোন গেরস্থের খাটের
অন্ধকার কোনায়

ছেড়াঁ ত্যানার কুচিগুলো তাই তুলে দিতে ইচ্ছে করে
ময়লাওয়ালার ভ্যানে
সংশোধনের যোগ্য শব্দগুলো যেন না ফিরে আসে
উদ্বাস্তুর কানে

যে কবিতাওয়ালা রওনা হয়েছিল তোমার পানে
ওখানে আমার কিছু সংশয় ছিল


রাত ২:২১, ১৫-০৭-২০১৫খ্রি: কুড়িগ্রাম

Thursday, June 4, 2015

বার বার গাইতে ইচ্ছে করে

ইচ্ছে করে
ইচ্ছে করে, অন্য একটা আকাশ দেখি
একই মাটির উপর অন্য দিক্ দিগন্ত
অন্ন-শস্য অন্য রকম ফুল ফুটন্ত
ইচ্ছে করে, অন্য একটা আকাশ দেখি

অন্য সময় অসুখ এবার ইচ্ছে করে
আমার দেশে, সবার দেশে সবার ঘরে
ঘরে এবং বাইরে সময় অন্য হবে
অন্য রকম দিনগুলো যে আসবে কবে?
ইচ্ছে করে

ইচ্ছে করে, শুনতে আমার অন্য কথা
অন্য রকম শব্দ এবং নীরবতা
ইচ্ছে করে, শুনতে আমার অন্য কথা

অথবা খুব অন্য রকম দিনে রাতে
ইচ্ছে করে অন্য রকম গান শোনাতে
ইচ্ছে করে

ইচ্ছে করে, সবার দু‘হাত ভরে উঠুক
সবার রান্না ঘরে ভাতের গন্ধ ছুটুক
ফুলের চেয়ে ভাতের গন্ধ ইচ্ছে করে
আমার দেশে সবার দেশে সবার ঘরে
ইচ্ছে করে

ফুলগুলোকে তাই বলে কি বাদ দিতে চাই?
শস্য এবং ফুলের জন্য গান গেয়ে যাই
ইচ্ছে করে স্বপ্ন ধরুক অন্য মানে
বেঁচে থাকার অন্য কথায় অন্য গানে
ইচ্ছে করে........................................,লিরিক্সঃ কবীর সুমন

Tuesday, June 2, 2015

অনার্জিত শিক্ষাপুরাণ (সংগৃহীত)

গল্পটি প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ স্যার এর অনার্জিত শিক্ষাপুরাণ বই থেকে নেয়া। সরল ভাষায় শিক্ষার স্বরূপ, শিক্ষকের অবয়ব নিয়ে শতাব্দীকাল আগের একটি গল্প বলেছেন। বহুবারই পড়েছি, নতুন করে আবার পড়তে শুরু করলে আগের চেয়ে বেশী আগ্রহ নিয়ে শেষ করতেই হয়। আপনাদেরও ভাল লাগতে পারে।
ভারতের গুজরাট রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এক শিক্ষামনস্ক ব্যক্তি যিনি উনিশ শতকের শুরুতে ওকালতি শুরু করেন। দ্বার পরিগ্রহ করেন তার পরে। একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। পুত্রস্নেহ তাকে ভাবতে শুরু করায়, এ সন্তান কি করে শিক্ষিত হয়ে উঠবে। তিনি ওকালতি ছেড়ে ১৯১৬ সালে প্রাদেশিক শিক্ষা ডিরেক্টরের অফিসে গিয়ে প্রাথমিক স্কুলে একটি চাকুরির আবেদন করেন। তিনি বেশি শিক্ষিত। শিক্ষকতার কোন অভিজ্ঞতা নেই এবং শিক্ষা বিষয়ে কোন ট্রেনিং নেই বলে তার চাকুরি হলো না। তার আগ্রহ দেখে ইংরেজ সাহেব তাকে একটি বেসরকারি স্কুলে অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করলেন। এ সুযোগে গিজুভাই ভাদেকা একটি শর্ত জুড়ে দিলেন যে তিনি তার মতো করে পড়াতে চান এতে যেন বাধা দেয়া না হয়। সাহেব বললেন ঠিক আছে কিন্তু ঐ ক্লাশে যা শিখবার তা শেখা হয়েছে কিনা তার পরীক্ষা নেয়া হবে। ভাদেকা বললেন তার আপত্তি নেই তবে শর্ত পরীক্ষা সাহেব নিজে নেবেন। নিয়োগপত্র নিয়ে তিনি স্কুলে উপস্থিত। স্কুল প্রধানের চক্ষুস্থির। প্রথমত: তিনি শিক্ষক চাননি। দ্বিতীয়ত: একটি ক্লাসের দায়িত্ব মূলত তাকেই দিতে হবে। তৃতীয়ত: তার শিখন-পড়ন পদ্ধতিতে যেন বাধা না দেয়া হয়। সাহেবের চিঠি তিনি মান্য করলেন তবুও বললেন তার জন্য যেন অন্য ক্লাস, ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও পাড়া-প্রতিবেশীর নালিশ তাকে শুনতে না হয়। নতুন শিক্ষক বিনয়ের সাথে সবই মেনে নিলেন। শুধু অন্যের নালিশ বন্ধ করা সম্ভব নাও হতে পারে, কারণ ছাত্রদের আগ্রহ সৃষ্টিই তার কাজ, তার সৃজনশীলতাকে উস্কেদেয়াই তার রীতি, তাদের শাসন করা তার পদ্ধতি নয়; তিনি শিক্ষার অভিযাত্রায় তাদের সঙ্গী মাত্র, হয়তো বা পথের কাঁটা সরিয়ে দেবার কর্মটি তার, তার বেশি কিছু নয়। প্রধান শিক্ষক চিন্তিত হলেন সঙ্গত কারণে। তাকে সাথে নিয়ে তার জন্য চতুর্থ শ্রেণীর নতুন শাখা চিহ্নিত করে দিয়ে বললেন, কাল থেকে ক্লাস শুরু হবে।
নতুন শিক্ষক বাড়ি ফিরে এলেন। তার কানে বাজতে থাকল প্রধান শিক্ষকের কথা, প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাদান সহজ কাজ নয়, আর মনে রাখবেন পাঠ্যপুস্তক আছে, পাঠক্রম নির্দিষ্ট আছে, শিক্ষাদান সহায়িকা আছে,পাঠ্যক্রম তৈরি করাবার পদ্ধতি আছে, পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময় আছে, ভালো ছাত্রকে উৎসাহিত করার প্রয়োজনীয়তা আছে, কারণ বৃত্তি পেয়ে সেই তো স্কুলের মান রাখবে, আপনি এসব ভন্ডুল করবেন না। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ম বিধিও আছে। পাঠ্যপুস্তক দেখে নবীন শিক্ষকের হতভম্ব হওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। পাঠক্রমের মধ্যে নানা বিষয়ের সংমিশ্রণ তিনি দেখলেন। দেখলেন অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, কিন্তু শিক্ষার্থীর মনকে আকর্ষণ করে তেমন বিশেষ কিছু তো নেই। তরুণ মন তো উর্বর ভূমির মতো। সেখানে জীবনের আদর্শ, মূল্যবোধ. সমাজের কাছে দায়বদ্ধতা, নৈতিকতা সবই তো আনতে হবে এমনভাবে, যাতে সে এগুলোকে দায়ভার মনে না করে; আনন্দের আবহ যদি জ্ঞানের বাহন না হয়, তাহলে নিরস শিক্ষা তো আত্মবিসৃত হওয়ার পথ মাত্র। ছাত্রদের ভালো খারাপ বলে বিন্যাস করে নিলে তাদের যে ঐক্য এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এটাই বা সৃষ্টি হবে কি করে? নবীন শিক্ষকের এমন সব দুশ্চিন্তা তাকে সারা রাত জাগিয়ে রাখল । তবুও মনে মনে তিনি পরের দিন কীভাবে ক্লাস সাজাবেন, পাঠ দেবেন তার একটা ছক কেটে নিলেন।
সকালে সময়ের অনেক আগে স্কুলে পৌছলেন। দরজা খোলা নাই। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত। ছাত্ররা আসছে মলিন কাপড় পড়ে হট্টগোল করতে করতে। পিয়ন স্কুল প্রধানের বাড়ি থেকে চাবি এনে ক্লাস খুলে দিল। চেয়ার টেবিল বেঞ্চ কিছু ঝাড়া হলো না। জানালায় ছাদে মাকড়সার ঝুল। ঘন্টা বাজল সময় মতো। নবীন শিক্ষক ক্লাসে গেলেন। কেউ তাকে দেখে হেসে ফেলল, কেউ চিমটি কটল, কেউ হাই তুলল, কেউ একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকল যেন এমন আজব প্রাণী কখেনো দেখেনি। কেউ কেউ বাইরের দিকে তাকিয়ে রাস্তার ওপারের কান্ডকারখানা দেখতে থাকল। এর কারণ অবশ্য পরে বুঝতে পারা গেল তিনিই একমাত্র শিক্ষক যিনি খাতা বইপত্র এনেছেন ঠিকই, কিন্তু বেত আনতে হবে একথা ভাবতে পারেন নি।
নবীন শিক্ষক ছাত্রদের নাম ডাকলেন। কেউ কেউ এমন ভাবে জবাব দিল যেটাকে বেয়াদবী বলা যায়। তিনি শুধু সহাস্যে শুধরে দিলেন। তিনি বললেন, আমাদের প্রথম কাজ হবে নিঃশব্দে সৃষ্টি কর্তার কাছে শিক্ষার সুযোগ দানের জন্য কায়মন প্রাণে আত্মসমর্পিত হওয়া। এক মিনিট নিস্তব্ধ প্রার্থনা। ছাত্ররা নিঃশব্দ না থেকে বরং নিজেদের মধ্যে সশব্দ কলকাকলিতে নিযুক্ত থাকল। কেউ কুকুরের ডাক, কেউ শেয়ালের ডাক অনুকরণ করল। নবীন শিক্ষক দরজা জানালা বন্ধ করেও শব্দের মাত্রা কমাতে পারলেন না। অন্য ক্লাশের শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের কাছে নালিশ জানালেন। নবীন শিক্ষক কিছু একটা ভেবেই ছাত্রদের ছুটি দিয়ে দিলেন। ছাত্ররা দৌড় ঝাপিয়ে হৈ চৈ করে চলে গেল। প্রধান শিক্ষক কৈফিয়ত চাইলেন তৎক্ষণাৎ। নবীন শিক্ষক বললেন ছাত্রদের মন তো পড়ায় ছিল না। স্কুলকে ওরা ভালোবসে না, ওরা স্কুলের পরিবেশে অস্বস্তি বোধ করে অবাধ্য হয়। আমাকে ওদের বুঝতে হবে, ওদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে, তবেই না ওদের পাঠ শুরু হতে পারে। জোর করে ক্লাসে ধরে রেখে পড়া পড়া খেলা হয়, পড়াশোনা হয় না। নবীন শিক্ষকের নামে নালিশ গেল উপর মহলে। অসময়ে ক্লাস ছেড়ে দেয়ায় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং এ কারণে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়িত্ব নিতে হবে এমন কড়া চিঠি পেলেন তিনি।
পরের দিন। কাস শুরু হলো। ছাত্ররা আবার হৈ চৈ করে ছুটির প্রত্যাশা করতে লাগল। নবীন শিক্ষক বললেন গল্প শুনবে? এবার সাড়া পাওয়া গেল। গল্প শুরু হলো। একটু বলেন তার পর থামলেন। ছাত্ররা বলে এর পরে কি? এভাবে বলতে বলতে স্কুলের সময় পার, গল্প কিন্তু শেষ হলো না। মহাভারতের গল্প রসিয়ে রসিয়ে শব্দের অর্থ অনুষঙ্গ বলে এর ভেতরে যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুণাবলী ও আদর্শ আছে তা বলতে সময়ের দরকার। ছাত্ররা স্কুলের পরেও থাকতে চাইল। কিন্তু সেদিনের মত শেষ করে নবীন শিক্ষক বললেন কাল আবার হবে, কিন্তু তার আগে কিছু পড়তে হবে। প্রধান শিক্ষক এসে দেখে গিয়েছেন যে গোলমাল নেই কিন্তু পড়াশুনাও নেই। ছাত্ররা পরীক্ষায় ভাল করবেনা। তিনি এমনটি চান না। নবীন শিক্ষক বললেন শৃঙ্খলা চাই কিন্তু নিরানন্দ শৃঙ্খলা তো শিক্ষার আসঙ্গ সৃষ্টি করে না।
পর দিন স্কুলের দরজা খোলার আগেই ছাত্র হাজির। শিক্ষকও হাজির। গল্প চাই, সবুর সয়না। নবীন শিক্ষক জানতে চান কার কতটুকু মনে আছে। কি ভালো লেগেছে। কোন শব্দ নতুন শিখেছে। নতুন শব্দের বানান কে জানে। শব্দের প্রতিশব্দ কি হবে। শুরু হয়ে যায় শব্দ নিয়ে খেলা । অন্য ক্লাসের ছাত্ররাও ভীড় করে। শব্দ বলে, শব্দের অনুষঙ্গ বলে, শব্দ গল্পের কোথায় কেন এসেছিল তাও বলে। শব্দে শব্দে কথায় কথায় গল্পের আসঙ্গে ভাষার চর্চা হয়ে যায়। ক্লাস শুরু হয়। অন্য কাসে হৈ চৈ, এ ক্লাসে পড়া। অন্য ক্লাসও গল্প চায়। প্রধান শিক্ষক আবার আসেন। নবীন শিক্ষকের মত সব শিক্ষককে গল্প জানতে হবে? কেবল সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সব শিক্ষক মিলে উপরে নালিশ পাঠান। নবীন শিক্ষক বলেন, ঠিক আছে গল্প বলার ক্লাস হবে ক্লাসের শেষে। সন্ধ্যা হয় ছেলেরা বাড়ি ফেরে না। অভিভাবকেরা আসেন, আবার নালিস। স্কুলে তো পড়তে পাঠাই, গল্প শুনতে বা বলতে নয়। তখন ঠিক হলো গল্পের ক্লাস হবে সে সাথে খেলাও হবে, কিন্তু ছেলেদের সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে হবে। ছেলেদের মুখ কালো। বেশি করে গল্প হবে না। আবার আলোচনা। গল্পের বই কেনা হবে। সবাই একটা করে বই কিনতে পয়সা দেবে। নবীন শিক্ষক টাকা জমা করে বই কিনে আনবেন।
কিছু ছেলে পরদিনই দশ পয়সা জমা দিয়ে দিল। অন্য ছেলেরা বলল তাদের বাবা মার মত নেই। কিছু ছেলে টিফিনের টাকা জামা দিল। আবার নালিস, নতুন মাস্টার কেবল ছেলেদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করেন। ঠিক হলো পড়ার বই- এর পয়সা জমা দিয়ে থাকলে ফেরত দেয়া হবে। যারা পয়সা দিয়েছে তারাই প্রথমে বই পাবে, তবে অন্যরাও বই পড়বার সুয়োগ পাবে লটারী করে। বই পড়বার শর্ত হলো দুটো, বই- এ কি গল্প সেটা বলতে হবে সবাইকে আর ছোট্ট করে সেটা লিখে দেয়ালের বের্ডে টাঙ্গিয়ে দেয়া হবে। কার লেখা ভালো সেটা ঠিক করবে সবাই মিলে আর তাকে লেখার পেন্সিল কিনে পুরস্কার দেবেন নতুন মাস্টার। হাতের লেখা হলো, শব্দ লেখা হলো, নিজের মত করে লেখা হলো। ভালো-মন্দ বিচার হতে লাগল প্রায়শই, কটা বই এলো, কটা বই পড়া হলো, কত পয়সায় কেনা হলো, এসব করতে করতে অঙ্কের নেশা জমে গেল। কে নবীন শিক্ষকের সাথে এ কাজ গুলো করবে তার প্রতিযোগীতা চললো। এ সুযোগে যোগের নিয়ম, বিয়োগের নিয়ম, গুনের নামতা, ভাগের প্রক্রিয়া শেখাতে লাগলেন নবীন শিক্ষক।
প্রধান শিক্ষক বললেন এমন করে বই পড়ে পাগল হতে তো কখনই দেখিনি ছেলেদের। বই পড়ার নেশায় ক্লাসের পড়ায় ও মন এসছে কিন্তু সামনে যে স্কুলগুলোর শারিরীক প্রতিযোগিতা। কে নেবে ভার, আগে যিনি নিতেন তিনি তো বই-এর কাছ থেকে এদের সরাতে পারেন না। ভার পড়ল নবীন শিক্ষকের উপর। বই এর ক্লাস ছাটাই হবে না, কিন্তু ক্লাস শুরুর আগে খেলা হবে। নবীন শিক্ষক তাদের লাইন করে দাঁড় করালেন। কাউকে বললেন কাপড় ধুতে হবে। কাউকে বললেন দাঁত পরিস্কার হতে হবে। কাউকে বললেন বোতাম লাগাতে হবে জামায়। কাউকে বললেন নখ কাটতে হবে। বাড়ি থেকে নালিশ, এ কেমন তরো ব্যবহার। নবীন মাস্টার ছুটির দিনে সবাইকে নিয়ে ঘাটে বসবেন যার যার কাপড় কি ভাবে পরিস্কার করতে হবে ধুয়ে তারই তদারকীতে। এত কাপড় কোথায় শুকাবে। স্কুলের বারান্দায় দড়ি বাঁধা হলো। দুপুরের মাঝে সব শুকিয়ে সাফ। এর মাঝে দাঁতন করা হলো। নখ কাটা হলো, একনকি চুল ছাটানোও হলো। এবার খেলা, সুইয়ে সুতো ভরা আর জামা বা প্যান্টের বোতাম মেলানো বোতাম খুজে পাওয়া। দেখতে দেখতে হৈ হুল্লোড়ে সবার জামা কাপড়ে বোতাম লাগানো হলো। যারা পারেনা তাদের হাবা বলে অন্যরাই লাগিয়ে দিল মজা করে। এরপর হল কিভাবে ভাজ করে বালিশের নীচে রেখে দিলে এগুলো ভালো দেখাবে সেটা শেখানোর পালা। পরদিন সকালে প্রবীণ মাস্টার বিমোহিত, এত ভালো তো কখনই দেখায়নি এদের।
নবীন মাস্টার কিন্তু এত তুষ্ট হলেন না। বললেন সামনের রোববার স্কুল পরিস্কার হবে আর ক্লাস সাজানো হবে। ঝাড়– লাগবে, সোডা লাগবে, বালতি লাগবে। কে দেবে খরচ? মাস্টারের বাড়ি থেকে ঝাড়– আর বালতি এল আর সোডা এল এক অভিভাবকের দোকান থেকে। মেঝে সাফ হলো। চেয়ার বেঞ্চ ধোয়া হলো, জানালা দরজা মোছা হলো। এর মধ্যে থেকে তৈরি হলো কাজের ব্রিগেড। সহকর্মের মাঝে তৈরি হলো সহমর্মীতা। প্রবীন মাস্টার তবুও বলেন শরীরচর্চার কী হলো। তিনিই তাদের নিয়ে গেলেন মাঠে, দলে দলে ভাগ করালেন, কোন দল কাবাটি খেলল, কেউ দাড়িয়াবাঁধা, কেউ গোল্লাছুট। কিন্তু গোল বাধল খেলা শেষে যখন জিতিয়ে দল হারিয়ে দলকে ঠাট্টা করছিল তখন কেউ একজন মারল ঢিল আর তা যেয়ে লাগল কাজনার কপালে, রক্ত বেরুল। কান্নাকাটি মারামারি ঠেকায় কে? ডাক পড়ল নবীন মাষ্টারের তিনি তাড়াতাড়ি নিজের জামা ছিড়ে রক্ত মুছিয়ে ব্যান্ডেজ করে সবাইকে লাইন বেঁধে দাঁড় করালেন। তিনি গান বাঁধলেন খেলা হলো সবার মিলন মেলা, কেউ হারে খেলাতে কারো হয় জিতে ফেলা কিন্তু খেলা শুধুই খেলা, হারজিত আছে এতে ভেদাভেদ নেই তাতে একসাথে মিলে থাকা সেই হলো সার।
প্রথমে আস্তে আস্তে কেউ কেউ গলা মেলাল তারপর তালি দিয়ে দিয়ে সবাই জোর গলাতে গান বাধল। নবীন মাস্টার শুধু বললেন, মনে থাকবে তো তাহলেই রোজ খেলা হবে, না হলে সব বন্ধ। সবাই দৌড়ে এসে নবীন মাস্টারকে হাতে ধরে বলল, স্যার ভুল হয়ে গেছে আর হবে না। প্রবীণ মাস্টার গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে থাকলেন কিন্তু নবীন মাস্টারের চোখ তখন সিক্ত। প্রবীণ মাস্টারকে বললেন ওদের ভালবাসা পেয়েছি দেখবেন ওরা পড়াশুনায়ও ভালো করবে। কেবল ক্লাসের বই নয়, ওরা এখন নানা ধরনের বই পড়াবার স্বাদ পেয়েছে, দেখবেন ওদের পড়া আর লেখা দুটোতেই ভালো হবে। আর হিসাব শিখেছে, শুধু অঙ্কের সূত্র ধরিয়ে দেয়া, তাহলেই বাকিটা হবে। কিন্তু শিক্ষ কি কেবল কপাতা পড়া, কটা আঁক কষা? ওদেরকে ভালো জীবনের জন্য তৈরি হতে হবে। সবাই ভালো ছাত্র হয় না, কিন্তু সবাই ভালো মানুষ হতে পারে, আমরা যদি ওদেরকে যান্ত্রিকতায় বেপথু না করি। প্রবীণ মাস্টার শুধু বললেন, উকিল ছিলেন শিক্ষার এ ভাবনা কোথায় পেলেন। নবীন শিক্ষক হেসে বললেন, নিজের ছেলেকে ভালোবেসে সব ছেলে মেয়েকেই ভালো বেসে ফেলেছি, ওখান থেকেই আমার শিক্ষা ভাবনার শুরু। আমরা শিক্ষকেরা কি এমনভাবে ভাবি, ভেবেছি বা ভাবতে পারি?
পরদিন অভিভাবকের একদল এসে প্রবীণ মাস্টারের কাছে হাজির। তাদের অভিযোগ ছাত্ররা বাড়ির ময়লা কাপড়, চাঁদর, পর্দা, বালিশ, বাসন, দুয়ার এসব নিয়ে মায়ের সাথে বোনের সাথে তর্ক করছে আর সব সাফ না হলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে এমন ভয়ও দেখাচ্ছে। অভিভবকদের সাথে এসেছেন পৌর কমিশনার যিনি বিদ্যালয় পরিদর্শকও বটে। প্রবীণ শিক্ষক মাথা চুলকালেন কিন্তু বললেন, ওরা কি অন্যায় কিছু করেছে?
বাড়িতে জ্বালাতন করছে এর চাইতে অশিক্ষা কি হতে পারে?
এদের বিদায় করে ডাকলেন নবীন শিক্ষককে, বললেন এমন হলে তো ছাত্র চলে যাবে, সাহায্য বন্ধ হবে, স্কুল উঠে যাবে। নবীন শিক্ষক বললেন, শিক্ষার তাৎক্ষণিকতা উৎরে ওরা জীবনময়তা বুঝতে পেরেছে, এতে আমার আনন্দ হচ্ছে, কিন্তু ওদের আমি বোঝাবো, ওদের সাথে প্রয়োজনে ওদের বাড়িতে যাব, ওদের বাবা মার সাথে কথা বলব। স্কুলের চার দেয়ালে শিক্ষা আবদ্ধ থাকলে সে শিক্ষা অনর্থক, শিক্ষা তো জীবনযুদ্ধের প্রস্তুতি, সহজ সরল কিন্তু অর্থবহ জীবন, পরিচ্ছন্ন সুন্দর জীবন; চাকুরী হলো জীবিকা, শিক্ষা তো জীবিকার জন্য নয়, শিক্ষা হলো সমাজবদ্ধ মানবতার বীজ বপনের বুদ্ধিদীপ্ত হাতিয়ার।
নবীন শিক্ষক যান ছাত্রদের বাড়ি, অভিভাবকেরা তটস্থ হন। আলাপচারিতা হয়। সবশেষে হলো ছেলের বর্তমান পরিবর্তিত মানসিকতা নিয়ে উদ্বেগ। নবীন শিক্ষক বলেন, ছেলে নয় দোষ তারই। তিনি ক্ষমাপ্রার্থী, কারণ ওদের সাথে নিয়েই শিক্ষার নির্যাস স্কুল থেকে গৃহে প্রসারণ তার করা উচিত ছিল। তারপর ছাত্রকে নিয়ে কুয়ার ধার সাফ করলেন। গাছ তলার পাতায় আগুন লাগালেন, পয়ঃব্যবস্থা ধুয়ে দিলেন, ঘরে আলো বাতাস আসতে পারে সে জন্য আসবাব বদল করে ছেলে যেখানে মাদুর পেতে পড়ে সে জায়গাটা গুছিয়ে দিলেন। অবশ্য কিছু সময় যেতেই বাড়ির সবাই তার সাথে হাত লাগালেন। কাজ শেষ হবার আগে ময়লা কাপড়গুলো কুয়ার পাড়ে জমা করে গরম পানিতে সাবান লাগিয়ে রেখে আসলেন। বললেন, ধুয়ে নেড়ে দেবেন, শুকিয়ে যাবে। বাড়িতে সুন্দর পরিচ্ছন্ন জীবন স্কুলের জীবনকেও সুন্দর করে দেয়।
নবীন মাস্টারের গৃহ নবায়নের আনন্দময় কাজ ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ল পাড়ায় পাড়ায়। স্কুলে এসে তার খবর দিয়ে যেতে লাগলেন অভিভাবকেরা স্বয়ং। ক্ষুব্ধ হলেন স্কুলের শিক্ষরা, স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যরা, পড়াতে এসে সমাজ সংস্কার তো তাদের কর্ম নয়। অবৈতনিক উদ্ভট চিন্তার মানুষ সম্পর্কে উপরের মহলে নালিশ যেতেই লাগল। শিক্ষা পরিচালক তাই নিজে না জানিয়ে উপস্থিত স্কুল শুরু হবার আগেই। দূর থেকে দেখলেন সব ছাত্র এসে নবীন শিক্ষককে প্রণাম জানিয়ে যায়, তার সাথে কথা বলে, কিন্তু অন্য কোন শিক্ষকের সাথে ছাত্রদের এমন সম্পর্কেই নেই বরং ছাত্ররা তাদের দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয় যাতে নমষ্কার না জানাতে হয়। স্কুল বসলে শিক্ষা পরিচালক এলেন স্কুলে। সব শিক্ষকই স্বদেশী নবীন শিক্ষকের শিক্ষাদান সম্পর্কে জ্ঞানহীনতাকেই নিন্দাবাদ জানালেন। শিক্ষা পরিচারক বললেন, তাহলে পরীক্ষা হোক আজই। শিক্ষকেরা তটস্থ, ছাত্ররা বিব্রত।
প্রথমে গেলেন নবীন মাস্টারের ক্লাসে। বললেন প্রশ্ন কর, লিখতে দাও কেমন শিখিয়েছ দেখি। নবীন শিক্ষক তাদেরকে লটারী করে একটি বইয়ের যে কোন গল্প বেছে নিতে বললেন। প্রশ্ন হলো সার সংক্ষেপ লিখতে হবে, কিন্তু বইয়ের শব্দের কোনটিই ব্যবহার না করে বিকল্প শব্দ ব্যবহার করে এটি করতে হবে। পড়তে সময় দশ মিনিট, লিখতে সময় দশ মিনিট। তার পর একে অন্যের খাতা দেখবে দশ মিনিট। শিক্ষা পরিচালক তো হতবাক। পরীক্ষার শেষে ছেলেদের খাতা দেখা শেষ হলো, তারপর নবীন শিক্ষক প্রতিটি খাতায় আরও কি শব্দ ব্যবহার হলে ভাষার ব্যঞ্জনা ভালো হত, কোথায় কোন ভুল বানান হয়েছে তা ব্যাখ্যা করে পনের জনের জন্য তিরিশ মিনিট ব্যয় করলেন। তারপর শিক্ষা পরিচালককে বললেন, এবার ওদের মূল্যায়ন আপনি করুন, নম্বর দিয়ে ভালো মন্দ নির্দেশ করবেন না। ওদের বলুন কতটুকু শিখেছে, আর কি শিখতে হবে কতদিনে সে শেখা আপনি দেখতে চান। আবার অবাক হলেন শিক্ষা পরিচালক, নবীন শিক্ষক বললেন, এক পরীক্ষার নম্বর ওদের শিখনের মানকে নির্দেশ করে না, পরীক্ষা হলো ওদের যাত্রাপথের মাইল ফলক, কে কতটুকু পিছিয়ে আছে, কাকে কিভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হবে তারই একটি প্রক্রিয়া । ভুল বানান, ভুল শব্দ ব্যবহার, সবই আছে। কাল আবার ওরা লিখবে, আমি কাউকে শ্রেষ্ঠ বা নিকৃষ্ট বলি না। ওতে ওদের মধ্যে বিভাজন আসে। সবে মিলে শেখার আনন্দ চালে যায়। ওদের নতুন নতুন পড়া থাকে, বাড়ির কাজ থাকে, ক্লাসে পাঠ হয়। সবই আছে এ পদ্ধতিতে।
শিক্ষা পরিচালক চিন্তিত মুখে বেরিয়ে গেলেন পরীক্ষা পদ্ধতির নব ব্যবহার বিমোহিত হয়ে। নবীন মাস্টার বলছে, শিক্ষার কেন্দ্রে তো ছাত্র, শিক্ষক কেবল উজ্জীবক, তার শাসনের প্রয়োজন নেই, আছে বন্ধনের আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে সাথীর ভুমিকা। সাথী হিসাবে তাকে সুপথ চেনাবার কাজ না করতে পারলে বিফলতা শিক্ষকেরও, ছাত্রের শুধু নয়। পথ চলার আনন্দেই ওরা শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়, ওরা একত্রে কাজ করতে শেখে, ওরা বইয়ের বাইরে পৃথিবীকে জানতে চিনতে শেখে। ভূগোল পড়তে ওরা তথ্য মুখস্থ করে না, দেশ সম্পর্কে জানে আর দেশ থেকে দেশের পার্থক্যটা বুঝে নেয়, বুঝে নেয় তার কারণ, ভুগোল বই যেভাবে তথ্যাকীর্ণ তাতে তো ওদের আনন্দ হয় না, ইতিহাসে রাজা-রাজরার কাহিনী পড়ে ওদের আনন্দ হয় না, কিন্তু মানুষ সে সময়ে কিভাবে বসবাস করত, কিভাবে জীবনকে সমৃদ্ধ করত, কি কারণে তারা অধঃপাতে যেত এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজে। ইতিহাসকে দেখে তারা অতীতের আলোকে নয়, বর্তমানের বাস্তবতায়। তারা এনিয়ে গল্প লেখে, নাটক লেখে, পদ্য লেখে, গান লেখে, শিক্ষা পরিচালক সব শুনলেন দেখলেন। প্রশ্ন করলেন, বৃত্তি পরীক্ষায় কী হবে? নবীন শিক্ষক শুধু হাসলেন। সাহিত্য, ভাষা, ইতিহাস, ভূগোল, সমাজ, বিজ্ঞান, অংক, ধর্ম, সংস্কৃতি, গান, ছবি আঁকা সব একাকার হয়ে যেতে থাকে, অন্বিত হয়ে যায়, এদের ভেতরে পারস্পরিক সম্পর্কও স্পস্ট হয়ে দেখা দেয়। ছাত্রদের নতুন নতুন প্রশ্ন মনে জাগে। ক্লাসে সেসব আলোচিতও হয়।
নবীন শিক্ষককে ডেকে পাঠালেন শিক্ষা পরিচালক। তার অভিযোগ কি করে এমনভাবে পড়ানো হলে এতদিনের পদ্ধতিকে রক্ষা করা যাবে। নবীন শিক্ষক তো সব লন্ড ভন্ড করে ফেলছেন। শিক্ষকতা তো একটি নির্দিষ্ট কাজ, একে তা গন্ডীবদ্ধ না করলে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যই বিনষ্ট হবে। নবীন শিক্ষক বিনয়ের সাথে বললেন, যাঁরা বই লেখেন তাঁরা পন্ডিত, তার পন্ডিত্য অনেক কম, কিন্তু পন্ডিতেরা শিশুর মনকে কি করে ছুঁতে হয় তা জানেন না বলে বিধিবদ্ধভাবে নির্দিষ্ট ছকে জ্ঞানসমৃদ্ধ যে বই লেখেন তার সাথে ছাত্র তো নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারে না। কিন্তু ঐ জ্ঞানই তাকে দেয়া যায় তার গৃহ, পরিবেশ, স্কুল, লোকালয়, পুরান বর্তমানের সত্যকাহিনীর বাস্তবতায় যা সে বোঝে। শিক্ষকতা একটা ধর্ম, একে জীবনে ধারণ করতে হয়, জ্ঞানী মাত্রেই শিক্ষক নন। নবীন শিক্ষক বিদায় নিলেন, শিক্ষা পরিচালককে নানাবিধ প্রশ্নের সামনে ফেলে দিয়ে। পাঠ্যক্রম, পাঠ্যপুস্তক, পাঠ্যাভ্যাস, পাঠদান সবই তো নতুন করে ভাবতে হবে। জ্ঞানের অন্বেষায় জীবন, না জীবনের অন্বেষায় জ্ঞান তারও তো মীমাংসা হলো না। তবে এটা ঠিক জীবনকে ঘিরেই শিক্ষা, জীবনকে নিয়েই শিক্ষা, জীবনের প্রয়োজনে প্রয়োজনকে আত্মস্থ ও সম্পৃক্ত করেই শিক্ষা। আর শিক্ষায় ছাত্রের মনোসংযোগ ঘটে যখন তার মনকে মানসকে মননে আপ্লুত করে দেওয়া যায় কৌতুহলের কোলাহলে। কেউ ওদের শেখাতে পারে না, শিখবে ওরাই কিন্তু শিক্ষার সাথীই হলো শিক্ষক।
নবীন শিক্ষক ঠিক করলেন তিনি কতটুকু করতে পেরেছেন তার পরীক্ষা হওয়া উচিৎ। কে নেবে সে পরীক্ষা। তার মন তাকে বলে দিল পরীক্ষক তো ছাত্ররা, কারণ ওরা কতটুকু প্রকৃত শিক্ষা পেয়েছে তা থেকেই তো আমার সার্থকতা যাচাই হবে। ছাত্রদের বললেন তার পরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন আর পরীক্ষা হবে ছাত্ররা শিখেছে সেটাকে সংবদ্ধভাবে অভিভাবকদের কাছে উপস্থাপন করে। ছাত্ররা বিচলিত, শিক্ষকদের পাগল হবার পালা। প্রবীণ শিক্ষক তাকে নিবৃত করতে চাইলেন, কিন্তু নবীন শিক্ষক বললেন আমার তো পূর্ণ দায়বদ্ধতা আছে এই ছাত্রদের কাছে, এদের অভিভাবকদের কাছে কিন্তু আপনাদের কাছে সামান্যই। প্রবীণ শিক্ষক তার নীতিবোধে প্রশংসা করলেন, কিন্তু সমস্ত ব্যাপারটি আবার ভেবে দেখার জন্য নির্দেশ দিলেন।
নবীন শিক্ষকের পরীক্ষার দিন এল স্কুলের প্রাঙ্গণে ছুটির পরে প্রায় সকল ছাত্র, অভিভাবক ও উৎসাহিত পথিক উপস্থিত। খবর পেয়ে শিক্ষা পরিচালকও এসেছেন। ছাত্ররা বেঞ্চ জোড়া দিয়ে মঞ্চ বানিয়েছে। সামনে দাসা লংক্লথের পর্দা ঝুলছে। পিছনে কালো পর্দা। ঘন্টা পড়ল। পর্দা সরে গেল। সব ছাত্র সারিবদ্ধ হয়ে প্রনায়ম করে বসে, তারপর ধীরে ধীরে উঠে দাড়ালো। নিরব এক মিনিট। তারপর সমস্বরে উচ্চারণ করল- ওঁ শান্তি। এরপর হল গান যেটি জ্ঞানের জন্য প্রার্থণা মঙ্গলময়ের কাছে। ছাত্ররাই খুঁজে বের করেছে তাদের লাইব্রেরী থেকে। তারপর নেচে নেচে নিজেদের এমনভাবে সাজালো যে সেটা দেশের মানচিত্রের মত দেখাল। শহরগুলোর স্থানে যারা ছিল তারা প্লাকার্ড নিয়ে দাড়িয়ে পড়ল। হাতে হাত ধরে কখনো রেল পথ, কখনো জল পথ, কখনো স্থল পথ নির্দেশ করল। ছাত্ররা সরে দাড়াল। তারপর তাদের শোনা এ দেশের অতীতের রাজা প্রজা সম্পর্ক নিয়ে মনুষ্যত্ব ও মানবতার একটি নাটিকা অবতারনা করল। সেখানে তাঁতী এলো, কুমার এলো, কামার এলো, কৃষক এলো, দর্জি এলো এমনভাবে জীবনের সব ছবি হল নাটকের আসঙ্গ। একজন করে মাঝে মাঝে গল্প বলল মহা মানবের জীবন থেকে নিয়ে শিক্ষা পাওয়া যায় এমন সব ঘটনা। কখনো মাতৃভাষায়, কখনো ইংরেজীতে চলল উপস্থাপনা। সব ছেলেরাই পরিচ্ছন্ন ও পরিস্কার পরিপাটি। সব উপস্থাপনার সাথেই ছিল পাঠ্যক্রমের যোগাযোগ। এসবই শেষ হল। নবীন শিক্ষক উঠে এসে হাত জোড় করে বললেন, বছর শেষ হয়ে এসেছে, সামনে বৃত্তি পরীক্ষা। ওদের পাঠ্যক্রম আমি আমার মত করে ওদের কে সাথে নিয়ে আত্মস্থ করেছি। সব স্বার্থকতা ওদের আর আপনারা যদি কোন ত্রুটি দেখে থাকেন, সে ত্রুটিটুকু আমার। আমার অবৈতনিক কর্মের আজ শেষ দিন। আপনাদেরকে নানা যাতনার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। শুধু প্রার্থনা করি নিয়মতান্ত্রিকতার যাতাকলে শিশুর শিক্ষাব্রতী মনকে শুকিয়ে মারবেন না।
কথা শেষ হল, কিছু হাততালি পড়ল। কিছু দীর্ঘশ্বাস, কিছু উচ্ছ্বসিত অশ্রুকণা। তারপর স্কুলের সব ছাত্র এসে নবীন শিক্ষককে ঘিরে নাচতে লেগে গেল আর গাইতে লাগল যেতে নাহি দিব। বিমুগ্ধ অভিভাবক আর শিক্ষকরা কি তখন দর্শক হয়ে থাকতে পারেন? শিক্ষা পরিচালক শুধু বললেন, আমার ত্রিশ বছরের শিক্ষা পরিচালনায় আজ নতুন নির্দেশনা পেলাম। শিক্ষার সবকিছুই নিত্যনতুন করে ভাবতে হবে, গিজুভাই ভাদেকার এক বছরের শিক্ষা অনুসঙ্গের সাথে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার যে বিস্তর ফারাক, সেটা কি করে দূর করা যায়, সেটা হোক আমাদের সবার সাধনা, বিশেষ করে যারা শিক্ষা নিয়ে ভাবছেন, কাজ করছেন, সাফল্যের কীর্তিগাথা প্রচারে এমন উচ্চকিত যে, বিনয় তিরোহিত হয়ে থাকছে।

Monday, May 18, 2015

আরবিতে নাম না রাখা এখন পাপ ! আরবিতে নাম না রাখা এখন অধর্ম !

অনেক দিন ধরেই খেয়াল করে দেখলাম আশেপাশে বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী, আত্নীয়স্বজন তাদের ছেলেমেয়েদের খুব অদ্ভুত অচেনা শব্দযুক্ত নাম রাখছে, নির্দিষ্ট করে বললে আরবি শব্দের নাম রাখছে। আরবির প্রতি আমার কোন ঘৃনা বা অশ্রদ্ধা নেই, কিন্তু হিব্রু যেমন আমি বুঝি না, তেমনি আরবিও আমি বুঝি না। তাই ছেলেমেয়েদের এই নাম রাখার সংস্কৃতি আমার কাছে খুবই অদ্ভুত লাগে। নাম বাংলায় না রেখে কেনো আরবিতে রাখা হচ্ছে সেটাতে অবাক হবার বিষয়।
আগের জেনারেশনে কিছুটা হলেও একটু ধর্মান্ধ ছিলো; কারো নাম যেমন আমিন, ওমর, রোকসানা, শাহজাহান, আকবর, সিরাজ, সাবেরা ইত্যাদি হত তেমনি সাগর, নীলা, রাত্রি, আকাশ, শুভ্র, লিসা, মারিয়া, সানি, পান্না, মনি, দূর্জয় ইত্যাদিও হত। কিন্তু এখন ব্যাপারটা আর সেই পর্যায়ে নাই, ছেলেমেয়ের নাম একমাত্র আরবিতেই হতে হবে, খুব সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।
তারপর একটা সময় আসলো যখন নিজের ভাস্তির নাম রাখার উপলক্ষ হলো। আমি খুবই আনন্দিত হয়ে ভাবলাম যাক একটা সুন্দর বাংলা নাম রাখবো এবং রাখলাম “অবন্তী”এর অর্থ উজ্জয়ীনি। কিন্তু তখন বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা এত সহজ না। বাংলা নামটা আমার বড় ভাইয়ার কাছে তেমন একটা পছন্দ হয়নি। আরবিতে নাম না রাখা এখন পাপ। আরবিতে নাম না রাখা এখন অধর্ম।
মুসলমানদের আরবী-ফার্সি নাম রাখার ব্যপারেও অনেক সুক্ষ্ণ নিয়ম আছে। আমাদের পরিচিত একজন বলেছিলেন “শাহজাহান” “শাহআলম” “আলমগীর” “জাহাঙ্গীর” এই চারটি নামের অর্থই “পৃথিবীর সম্রাট”। যেহেতু কোরআন অনুযায়ী পৃথিবীর সম্রাট একমাত্র আল্লাহ, মানুষ কখনো এটির দাবী করতে পারেনা, সেহেতু এই নামগুলি নাকি মুসলমানদের রাখা উচিৎ না। এমনকি আল্লাহর ৯৯টি নাম থেকে যদি কেউ কারো নামকরণ করতে চায়, তাহলে সেই নামের আগে অবস্যেই “আব্দুল” লাগাতে হবে।
বাংলা নাম রাখার জন্য আমাকে মা, ভাইয়া, পাড়া প্রতিবেশীর মতের বিরুদ্ধে যেতে হয়েছে; অনেককে বুঝাতে হয়েছে যে বাংলা নাম রাখাটাই স্বাভাবিক, আরবিতে নাম রাখার কোন যুক্তি নাই। এমনকি শেষ পর্যন্ত এটাও বলতে হয়েছে যে হাদিস মতে মেয়ের নাম রাখার অধিকার বাবার। কিন্তু এমনটা তো বাংলাদেশে হবার কথা ছিলো না! এটা দুঃখজনক। ছোট ব্যাপার হলেও, এটাও এক ধরনের ধর্মান্ধতা।
খুব বিস্তারিত লিখতে চাই না, কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলতে চাই বাংলায় নাম রাখলে সেটা ধর্মবিরোধী না, বরং সেটাই ইসলামকে সর্বজনীন ধর্ম হিসাবে আরো বেশি প্রতিষ্ঠিত করে। যারা কুরান হাদিস ঘাটাঘাটি করে, বাংলায় নাম রাখলে পাপ হবে না বলে তারা বলেছেন। তাই ছোট্ট একটা অনুরোধ, ছেলেমেয়ের নাম বাংলায় রাখুন, অন্তত ডাক নামটা বাংলায় রাখুন। কারন আমাদের ছোট ছোট ধর্মান্ধতাই সমাজকে সাম্প্রদায়িক করে তুলছে।

Monday, May 4, 2015

আমার “এই যে....”

……….সারা রাত ঘুমোতে পারিনি একবারও
বিছানায় শুয়ে-বসে এপাশ ওপাশ করে কাটিয়েছি সারাক্ষণ

মাঝে মাঝে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অস্থির হয়ে বলেছি
কটা বাজে এখন?
মাথার ওপর সেলিং ফ্যানটা অবিরাম ঘট্ ঘট্ করে ঘুরেছিল
নিঃস্তব্দ রাতে অনেক কিছুই ভাববার ছিল

মাঝে মাঝে অন্ধকারকে জিজ্ঞেস করেছি
তার সাথে কথা বলে নিচ্ছি সহজ ভাষায়
তোমার ক্ষুদে বার্তার জবাব কি দিব তা আসছেনা মাথায়

কেউ যেন অন্ধকারে নিঃসঙ্কোচে প্রশ্ন করলো আমায়
বলতে পারো?
কতোটা কাছে আসালে তাকে ভালোলাগা বলতে পারা যায়?
আমি বললেম হুম বিলক্ষণ পারি;
এ আর কি এমন!
গল্পে গল্পে সময় ছাপিয়ে সারাক্ষণ
কখনো লাল-কালোর দ্বন্দ পাকিয়ে-
শেষ বিকেলে দাবা খেলে-
সন্ধারাগে ছেলেমানুষি ঝগড়া হলে-
ঝগড়া শেষে রাগ ভাঙানোর অভিমানে-আপোষে-
যদি বলতে পারি ভালো থেকো যত্নে রেখো;
যদি বলতে পারি আমার হাতে গড়া এ পাহাড়ে এসে-
তোমার সেই চেনা চুড়ায় বসে ভাবো একবার
তোমাতে আমায় মিলে ছোট্ট গুটিসুটি এক পরিবার
আর আমার ছেলেপুলো গুলোকে
ভালো থেকো যত্নে রেখো;


(২৬ এপ্রিল ২০১৪খ্রি: তে মুঠোফোনে কথোপোকথনে, আসলে তখন লেখাগুলো ওই আমাকে সংরক্ষন করতে বারণ করেছিল, আজ হঠাৎ ফোনটা চাপতে চাপতেই বেড়িয়ে পরলো, শুরুতেই ফাঁকা জায়গায় তাঁর নামটা ছিল) 

Sunday, May 3, 2015

আমাদের প্রজন্ম “অ্যারেন্ঞ্জড ম্যরেজ” নামক অসুস্থচর্চাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাবে

কথাগুলো অভিজ্ঞতা থেকেই…
পরিবারের বিবাহযোগ্যা মেয়েটিকে আজ দেখতে আসবে ছেলেপক্ষ। সকাল থেকেই তার তোড়জোড়। হাতেমুখে উপটান লাগিয়ে মামীর হুকুম মতো বসে থাকতে হয়েছে মেয়েটিকে। ছোটোচাচীর পরামর্শে ঘন্টাখানিক ঘুমিয়েও নিয়েছে। সবার চোখেমুখে চেনা দুশ্চিন্তা, এবার মুখ রক্ষা হবে তো? বাবা-মা মুখে সেরকম কিছু না বললেও ওঁদের অসহায় মুখচোখ দেখে মায়া হবার বদলে, মেয়েটির অভিমান হয়। বরাবরই সে নিরীহ গোছের। মুখ ফুটে নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছার কথা জোর গলায় বলতে শেখেনি। এবার নিয়ে সাতবারের মতো তাকে দাঁড়াতে হবে অনেকগুলো তীক্ষ্ণ চোখের সামনে। যারা যাচাই বাছাইয়ের নামে ভালোমন্দ খেয়ে দেয়ে উঠে যাবার সময় আলগোছে জানাবেন 'পরে জানাচ্ছি।' গতানুগতিকভাবে তাকে আজও হয়ত শুনতে হবে, 'ছবিতে মেয়ের রংটা এতোটা বোঝা যায়নি তো! এসব অবান্তর প্রশ্ন সঙ্গে থাকা তথাকথিত শিক্ষিত পাত্রটির জন্য বাড়তি আনন্দের খোরাক। তার মুখ টিপে হাসতে থাকা, মেয়েটিকে সেরকম আভাস দেয়। ভীষণ ক্লান্ত লাগে মেয়েটির, তাকে ঘিরে এই এক প্রহসন নাটকে। খুব ইচ্ছে করে স্বভাব বিরুদ্ধ আচরণ করে প্রতিবাদ জানাতে। মাটি দু'ভাগ হয়ে সীতাকে অপমানের হাত থেকে রক্ষা করে ছিল প্রকৃতিমাতা। জীবন মিথ না। যে কারণে অভিভাবকের দল পাত্রী দেখবার নাম করে যেমন খুশি অপমান করে যেতে পারেন। যেখানে প্রতিবাদ নেই সেখানে প্রতিকার আশা করা বৃথা। এই শতকেও তাই পাত্রী দেখানোর রীতি লোপাট হয় না আমাদের সমাজ থেকে। হয়ত রেওয়াজে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু আচরণে কমবেশি সবাই নিজের নিজের ইচ্ছের ফর্দ মিলিয়ে নিতে আগ্রহী। বলছিনা একতরফা শুধু মেয়েদেরই বাছ বিচার চলে, ছেলেদের বেলায় এমনটা হয় না। কোথাও কোথাও ছেলেদেরও বাছ বিচার করা হয়। কিন্তু মেয়েদের অপমানের যন্ত্রণার কাছে সেসব নগণ্য। খুব কম পরিবার আছে যাদের মেয়ে/বোনের জীবনে এরকম অসহ্য অপমানজনক ঘটনা নেই। দুঃখের বিষয় নারীত্বের এই অপমানে নারীরাই সঙ্গ দেন যথেষ্ট মাত্রায়। একে অন্যের পছন্দ অপছন্দকে যেখানে সম্মান দেখাবার কথা, সেখানে তাকে অগ্রাহ্য করা বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে যেরকমটা হয় সেটি কী নারীর প্রতি অসম্মানের, অপমানের নয়? আমাদের সমাজবিধির মধ্যে মেয়েদের খাটো করবার চর্চা চলে এসেছে বলে আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে একজন শিক্ষিত পুরুষের তাকে প্রতিবাদহীন মেনে নেয়াটা তো শুধু নারীরই অপমান না পুরুষটির জন্যেও অপমানের, তার শিক্ষাদীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় এমন আচরণে। যে মেয়েটি শিক্ষিত হবার স্বপ্ন উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছে তাকে কেন অন্যের চিন্তার খোপে নিজেকে মানিয়ে নেবার আপোষ করতে হবে? আমার স্বপ্ন কেমন হবে সেটা অন্য একজন ঠিক করে দেবার কে? আমার নামের ব্যবচ্ছেদের স্বাধীনতাই বা অন্যের ইচ্ছা মাফিক কেন হতে হবে? কেন আমাকে অন্যের পোশাকে সাজতে হবে? অন্যের বাড়িয়ে দেয়া থালায় কেন আমি সোনামুখ করে খাবো? একজন ভিখিরিরও একটা নিজস্ব থালা থাকে। যুগ পালটেছে কিন্তু আমাদের আচরণ পালটানোর কোনো লক্ষণ নেই। অপমান মুখ বুঁজে সহ্য করে আমাদের অগ্রজেরা সংসার জীবন নামের মায়ায় নিজেদের জুড়ে দিলেও একুশ শতকে দাঁড়িয়ে আপনি কিংবা আমি কেনো তেমনটা মুখ বুঁজে সয়ে নেবো? মেয়ে দেখানোর নামে সমাজে চলতে থাকা নারীত্বের অপমান করার সভায় শিক্ষিত রুচিশীল পুরুষদের সবাইকে না হলেও একটা বড় অংশকে প্রতিবাদের ভূমিকায় দেখতে চাই। হোক প্রতিবাদ। প্রতিবাদ যেখানে, সুন্দর প্রতিকার সেখানে আলো হাতে এসে দাঁড়ায়। কনে দেখার এই অপসংস্কৃতিকে রুখে দিতে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের শক্ত অবস্থান থাকা চাই। বাধ্য হয়ে অপসংস্কৃতির ঢলে গা ভাসিয়ে দিয়ে এসব অনাচার মেনে নেয়াটা শুধু আপোষকামিতা নয়, এটা চরম কাপুরুষত্বেরও লক্ষণ। আমি জানি আজকাল অনেক ছেলে বেরিয়ে এসেছেন ওই কুসংস্কৃতি থেকে এবং একটা মেয়ের পছন্দ অপছন্দকে সম্মান দেখিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করতে শুরু করেছেন। কিন্তু তার সংখ্যা অতি নগণ্য। এখনো মধ্যযুগীয় সামন্ত মানসিকতা বিরাজ করছে অধিকাংশ পুরুষের মনে।পুরুষেরা যদি প্রচলিত এই কুসংস্কৃতিকে দৃঢ়ভাবে ‘না’ বলতে পারেন তাহলে সমাজ চলমান এই সংস্কৃতিকে বদলাতে বাধ্য হবে। সুতরাং পুরুষকেই এগিয়ে আসতে হবে নারীদের পাশাপাশি। বিয়ে হলো একটি যৌথজীবনের সূচনা। বিয়ের সংস্কৃতিতে নারী পুরুষের সমন্বিত সভ্য সহাবস্থান পরিবারের বাকী জীবনের জন্যও বিশেষ প্রয়োজনীয়। আসুন কুসংস্কৃতি বর্জন করে আলোর পথের যুথবদ্ধ যাত্রী হই। যখন স্কুলে পড়তাম, তখন আমার বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসতো এরকম(উদাঃ খালু উপসচিবের জামাই, প্রপিতামহ সাবেক চেয়ারম্যান এবং তার ভাই ছিলেন বৃটিশ আমলের জজ কোর্টের পেশকার, বোনের শশুর সেই কালে নায়েব গোমস্তা ছিলেন ইত্যাদি) এসব আমার বোনের বা হবু বোন জামাইয়ের কোন উপকারে আসাবে কি না তা জানা ছিল না। আসলে আমাদের সমাজে দুজন ব্যক্তির মধ্যে বিয়ে হয় না হয় দুটি পরিবারের মধ্যে, দুটি গোষ্ঠির মধ্যে। পরিবার কে খুশি করার জন্য দুজন মানুষ হয়তো সুখের ভান করে সারাজীবন কাটিয়ে দেয় অসুখি সর্ম্পকের বেড়াজালে, আমাদের প্রজন্ম এভাবে “অ্যারেন্ঞ্জড ম্যারেজ”নামক অসুস্থচর্চাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাবে এটাই প্রত্যাশা করি কিন্তু তার পরও এই চর্চাকে আমরা ধরে রাখি………….

Thursday, April 30, 2015

২৮তম জন্মবার্ষিকীতে.....

ডায়েরীর পাতা থেকে:
অনতীত জন্মপুরাণ
জন্মের পেছনে আমার কোন হাত নেই, এমনকি আমার বাবা মাও জানতেন না আমি পৃথিবীতে আসছি, এখনো অনেকেই আমার জন্মদিনটা ভালোবাসাদিবসে হওয়ায় (যদিও এদেশে ভালবাসা দিবস আমদানী হয় ১৯৯৩খ্রি: বিশিষ্ট লেখক শফিক রেহমানের হাত ধরে) অবিশ্বাস্যকর মনে করে কেন জানি বুঝিনা। আমার বড় দু-ভাইবোন থাকায় বাবা-মা আমাকে পছন্দ করে বেছে নেন নি, আমি হয়ে গেছি। সবাই বোধ হয় এভাবে জন্মায় না। আমার জন্মটাও তাই অনেকটা অপাঙত্ত্বেয় ভাবেই হয়েছে। বাবার কাছ থেকে শুনেছি, কোন এক দিন বাবা-মা জানতে পারেন আমি আসছি, তখনই একছেলে একমেয়ে নীতিতে বিশ্বাস রাখেন এবং আমার আসা নিয়ে তাঁরা অপ্রতিগ্রহ। সিদ্ধান্ত স্থির হল, আমাকে ভ্রুনাবস্থায় হত্য করা হবে । যথারীতি বাবা মহৌষধ নিয়ে হাজির। বাবা নিজে ইনজেক্ট করতে পারতেন কিন্তু নিজের স্ত্রী বলে তা সাহস না করে বড়ব্বার (বাবার বড় ভাই) দ্বারস্থ হলেন। বড়ব্বা পেশায় স্কুলশিক্ষক এবং গ্রাম্য ডাক্টার ছিলেন, তিনি ঐ ইনজেকশন দেখেই বাবা উপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে সেটি মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দেন এবং আমার এই গ্রহে আসার পথটা এক্কেবারেই নিশ্চিত করে দেন। বাবা আজ বেঁচে নেই মা আছেন, বড়ব্বাও আছেন। শুধু আক্ষেপটা বড়ব্বার প্রতি তিনি ইনজেকশনটি না ছুঁড়লেই পারতেন, স্যালুট বাবা! কেন জানি মনে হয় বাবাই আমার অহৃদ্য জন্মতত্ত্বটা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই হত্যাকরীর খাতায় নিজেকে নিবন্ধিত করতে চেয়েছিলেন।
(১৪ই ফেব্রুয়ারী ২০১৫খ্রি:, ২৮তম জন্মদিনের প্রথম প্রহর)

Wednesday, April 29, 2015

কবীর সুমনের একটি বিখ্যাত গানের লিরিক্স

“অমরত্বের প্রত্যাশা নেই, নেই কোন দাবী দাওয়া
এই নশ্বর জীবনের মানে, শুধু তোমাকেই চাওয়া
মুহূর্ত যায় জনমের মত, অন্ধ জাতিস্বর
হত জন্মের ভুলে যাওয়া স্মৃতি, বিস্মৃত অক্ষর
ছেঁড়া তালপাতা পুঁথির পাতায়, নিঃশ্বাস ফেলে হাওয়া
এই নশ্বর জীবনের মানে, শুধু তোমাকেই চাওয়া

কাল ক্যেউটের ফনায় নাচছে, লক্ষীন্তরের স্মৃতি
বেহুলা কখনো বিধবা হয় না, এটা বাংলার রীতি
ভেসে যায় ভেলা এবেলা-ওবেলা, একই শব্দ বুনিয়ে
আগেও মরেছি আবার মরবো, প্রেমের দিব্যি দিয়ে
জন্মেছি আমি আগেও অনেক, মরেছি তোমারই কোলে
মুক্তি পাইনি শুধু তোমাকেই, আবার দেখবো বলে
বার বার ফেলে এসেছি আমরা, এই পৃথিবীর টানে
কখনো ডাঙোর কখনো কোপাই, কপোতাক্ষর গ্রামে
ঘাঙর হয়েছে কখনো কাবেরী, কখনোবা মিসিসিপি
কখনো রাইন কখনো কঙ্গ, নদীদের স্বরলিপি
স্বরলিপি আমি আগেও লিখিনি, এখনো লিখিনা তাই
পথে মুখে ফেরা মানুষের গানে, শুধু তোমাকেই চাই
তোমাকে চেয়েছি ছিলাম যখন, অনেক জন্ম আগে
তথাগত তার নিঃসঙ্গতা, দিনের অস্ত রাগে
তারেই করুনায় ভিক্ষারীনি তুমি, হয়েছিলে একা একা
আমিও কাঙাল হলাম, আর এক কাঙাল দিলে দেখা
নতজানু হয়ে ছিলাম তখনো, এখনো যেমন আছি
মাধুকরী হও নয়ন মোহিনী, স্বপ্নের কাছাকাছি
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যরিকেড পড়ো, প্রেমের পদ্যটাই
বিদ্রোহ আজ চুমুর দিব্যি, শুধু তোমাকে চাই
আমার স্বপ্নে বিভোর হয়েই, জন্মেছ বহুবার
আমি ছিলাম তোমার কামনা-বিদ্রোহ চিৎকার
দুঃখ পেয়েছ যতবার, যেন আমায় পেয়েছ তুমি
আমি তোমার পুরুষ, আমি তোমার জন্মভূমি
যতবার তুমি জননী হয়েছ, ততবার আমি পিতা
কত সন্তান জ্বালাল প্রেয়সী, তোমার আমার চিতা
বার বার আসি আমরা দুজন, বার বার ফিরে যাই
আবার আসবো আবার বলবো, শুধু তোমাকেই চাই

আবার আসবো আবার বলবো, শুধু তোমাকেই চাই”…….কবীর সুমন(কলকাতা)

ভালোবাসা নিয়ে মার্লে

ভালবাসা নিয়ে মার্লে:

“তুমি তার জীবনের প্রথম, শেষ বা একমাত্র নাও হতে পার। সে আগেও ভালোবেসেছে বা সামনে আবার ভালোবাসবে। কিন্তু সে যদি তোমাকে এই মুহুর্তে ভালোবাসে, তাতে ক্ষতি কি? সে হয়তো পুরো খাঁটি নয়, তুমিও তো নও। তোমরা দুজনে মিলে হয়তো পুরো খাঁটি হতে পারবে না। কিন্তু সে যদি তোমার মনে আনন্দ দিতে পারে, সে যদি তোমাকে একটি বিষয়ে দ্বিতীয় বার ভাবতে বাধ্য করে, তোমাকে মানবিক করে তোলে এবং সে যদি ভুলও করে তুমি তাকে ধরে রাখো আর তাকে সব কিছু দাও, যা তোমার আয়ত্তে আছে। সে হয়তো প্রতিটি মুহূর্তে তোমার কথা ভাববে না কিন্তু সে তোমাকে তার নিজের একটা অংশ দিয়ে দেবে, যা তুমি ভাঙতে পার, সেটা তার হৃদয়। তাই তাকে কষ্ট দিয়ো না, তাকে বদলে ফেলো না। তার কাযর্কলাপ কষ্টিপাথরে যাচাই করতে বোসো না এবং সে যতটুকু দিতে পারে, তার থেকে বেশি চেয়ো না। সে যখন তোমাকে সুখী করে, তখন হাসো। তাকে বুঝতে দাও, সে কখন তোমাকে পাগল করে দেয় এবং যে সময় সে তোমার কাছে থাকে না, তখন তাকে মিস্ কোরো।”  

Friday, April 17, 2015

মাস দুয়েক আগের লেখা

আপনার পূণ:পৌনিক মৃত্যু আমার একখান কবিতাময় শরীর ছিল, যা আমায় ছেড়ে গিয়েছে আর একখান বুক ছিল যেখানে এখনো তোমার স্মতি আমি উঠতে পারতাম; বলতে পারতাম; কিন্তু কার জন্য!? আমি চিৎকার করতে পারতাম; কিন্তু কার জন্য চিৎকারটা দিব!? প্রেম, বন্ধু, এসব আমার থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলাম আর রাখবোই বা কার জন্য!? আমার মনের ইচ্ছায় আমি জেগে উঠতে পারতাম বা আবার ফিরে আসতেও পারতাম কিন্তু, শালা এখন তোকে কে“এই যে” বলে ডাকবে!? পেয়ে গেছিস একজনকে না? ধুৎত্ত্যরি মেয়েটি; যে বসেছিল; দাঁড়িয়েছিল; আমার পাশে, খোদার কসম আমি তাকে ওভাবে চিনতাম না আসলে দূরে থাকাতেই সুখ মরে যাওয়াতেই শান্তি পাই তার থেকে কিন্তু আমি উঠব কোন একদিন ওই পাহাড় চূড়ায় ছুটে চলার জন্য আবার কোন সুন্দরীর প্রেমে পড়ার জন্য............ (ছাত্রাবাস; প্রহর: রাত-০১:০৫,২৬/০২/২০১৫খ্রী:)


Thursday, April 16, 2015



আমার পোষা তিনটি খরগোশ ছানা, দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করবে, ওরা হিংসে, বিদ্বেষ, ঘৃণা, প্রেম, ভালবাসা, প্যাকেজ ভাললাগা এগুলোর কিছুই বোঝে না শুধু খাবার দিলেই খেয়ে একটু এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করে আবার ঘুমিয়ে পরে, ওরাই আমার একাকিত্বের আধারে এক ফালি আনন্দময় চন্দ্রালোক। ওরাও আমার কাছে আনন্দ খোঁজে,     তবে সময়-দিনক্ষণ-চোখের আড়াল-কারো সাথে যাচাই বাছাই করে নয়...একদম নিজের ভাললাগা করে। ওরা ভাললাগা লেনদেন করতে শেখেনি, ওরা প্যাকেজ ভাললাগা শেখেনি, ওরা সময়ের ব্যবধানে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে শেখেনি, নতুন নতুন প্রেম খুজে বেড়াতে শেখেনি.........................ওদের ছেড়ে দিলেও ওরা আমার কাছেই ফিরে আসবে কিন্তু যে কখনোই আমার ছিল না সে ফিরে আসে কেমন করে?

Wednesday, April 15, 2015

ইচ্ছে করে কত কিছু!

অতৃপ্ত আত্নচিৎকার

মাঝে মাঝে নিজেকে বিনির্মাণ করতে ইচ্ছে করে,
ইচ্ছে করে,
নিজেকে বানিয়ে ফেলি আজন্ম জাতিস্বর
ইচ্ছের হাওয়া থেমে থাকে না, মাঝে মাঝে গোত্তা খেয়ে
খেই হারিয়ে থেমে যায় যখন-

কিছু মুখ-কিছু অপূর্ন অবয়বকে দেখে-
ইচ্ছেরা প্রতিবাদ করে;
পথের ধারে কোন প্রতিবন্ধীর প্রতিবন্ধকতা দেখে, যা তার আত্ন সৃষ্ট নয়;

ইচ্ছেরা হাসপাস করে
কোন যুবতীর স্তনযুগল দেখে;
কিংবা ঐ দুখন্ড মাংস পিন্ডকে কল্পনায় একেঁ;
ইচ্ছে গুলি কিলবিল করে থেকে থেকে
যুবতির পেছনে হেঁটে যাওয়া বাবার ভ্রু কুঁচকানো কপাল
যেখানে কন্যাদায়গ্রস্থ পিতার চিরায়ত মানচিত্রের অবয়ব খচিত;

ইচ্ছেরা নিঃশ্বাস ফেলে
কোন নারীর নিশিথ প্রতিক্ষায়;
বাবা কাজে গেছে বলে মেয়েকে কোনমতে জলখাবারে
ভুলিয়ে রেখে ঘুম পাড়ানোর মিথ্যে আশ্রয়ের প্রহসনে;

ইচ্ছেরা নিঃশব্দে কাঁদে
সন্তান বড় হলে, বৃদ্ধ বাবা-মার নিঃসঙ্গতায়;
নিজের আকুতি শোনার শ্রোতা মেলা ভার ভেবেও
যাঁরা থাকে সন্তানের কথা শোনার প্রতিক্ষায়;

ইচ্ছেরা ব্যকুল হয়
যখন প্রবল আকাঙ্খা থাকার পরও
নিজের শক্ত ব্যমোটাকে সারাতে পারেনা
কোন এক নিভৃত গ্রামের বৃদ্ধা তার
একাকিত্বের মাঝে বরন করে মরণ যন্ত্রনাকে;

সমস্ত ভাষায় ইচ্ছেরা বেঁচেও, মরে বার বার
আর ইচ্ছে করে না নিজেকে সুখী করে দেখার......

Friday, April 10, 2015

বাগেরহাট ষাট গম্বুজ মসজিদ যাবার সৌভাগ্য  হয়েছিল, ২০১২খ্রিঃ প্রানিবিদ্যার ৪র্থ বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন, স্থাপত্য, ঐতিয্য আর সমুদ্রের স্পর্শ পাওয়া সুন্দরবন আর একবার যাবার ইচ্ছে আছে।

Sunday, April 5, 2015

আমাদের আবুল হোসেনদের সংসার

ছোট বেলা থেকেই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে দু পা অকেজো হয়, মা-বাবা মারা যাবার পরই সংসারের ঘানি টানতে টানতে জীবনের ৫৯টি বসন্ত পার করে এসেছেন। শ্রমজীবি হিসেবে আবুল হোসেন একজন সফল মানুষ। সারাদিন অন্যের বাড়িতে শ্রমবিক্রি করে বাশঁ, বেত, গোখাদ্য তৈরি সংশ্লিষ্ট কাজের বিনিময়ে পান ২০০-২৫০টাকা, তা দিয়ে ৫জনের সংসার কোন রকমে চলে যায়। সখের বশেই কোন এক বড় কর্মকর্তার বিয়ের ঘটকালী করেই ঘটক নামক অতি পরিচিত একটি পেশায় নিজেকে যুক্ত করেন। কুড়িগ্রাম রেলস্টেশনের নতুন শহরের এই পরিচিত মানুষটি কখনো কারো কাছে সহযোগীতা বা সাহায্য প্রার্থনা করেননি বরং তিনি যখন রাস্তায় বের হন তখন অনেকেই ভিক্ষুক ভেবে তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বলে, তার বাহনের সামনে নিজের পরিচয়টা লিখে এভাবেই তিনি ঘুরে বেড়ান শহর-গঞ্জ-গ্রামে। সংসার নামন পার্থিব খেলায় তিনি যুক্ত করেছেন ২৩২টি পরিবারের শুভ সূচনা


………………………………কুড়িগ্রাম চিরকুমার সংঘের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানাই!

Friday, April 3, 2015

বেশ কিছু দিন আগের লেখা

আত্নকথাগুলো নামে বেনামে

নাম মনে থাকলেও চেহারা ভুলে যাই
গন্ধের কথা মনে এলে এখনও সুঘ্রান পাই
বড় হওয়া বোধহয় আর হবে না আমার
তবু বেচেঁ থাকতে হবে যে কোন প্রকারে
দিনের আলোয় মরে যাওয়া তারারাও বেঁচে থাকে যেমন
রাতে দপ্ দপ্ করে জ্বেলে ওঠে অন্ধকারে//..............

......কবিতায়তনের শেষাংশ বিশেষ শেষ করতে পারিনি, শীত-বিকেলের দুবর্লতা আছে, বর্ণময় ধূসর রং আর শ্বেতচাদরে বেড়িয়ে পড়ি অজানার উদ্দেশ্যে- কেউ একজন কে খুঁজবো বলে কিন্তু তার দেখাতো কখনোই পেলাম না, কোন কালেও হয়তো পাবো না। কোথাও না কোথাও চলে যেতে হয় রোজকার অশান্ত মনের পিয়াসে, অখ্যাত বিছানার চাদরে প্রত্যবতর্ন হয় মধ্যরাতে। বেডশীটে আঁকা বিবিধ ছবি মনে রং ধরাতে পারে না, অনুদ্ধারকৃত বাস্তব স্বপ্নে দেখি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি চাঁদের পানে। গ্যস্ট্রিকের ভয়ে আক্ষেপ করা শুনতে শুনতে আনোয়ারু এর চায়ের দোকানে গেলে এখন তাকে বলতে শুনি আপনার তো আবার অ্যসিডিটি তাই অন্য কিছু দিব কি...? ভাবছি এবছর ডজন খানিক বই পড়ব, পড়তে গেলে ঘুমে জড়িয়ে আসে চোখ। বয়স বাড়তে বাড়তে আরো ছোট হচ্ছি, আরো ছোট হতে হবে সময়ের দ্বারে দ্বারে, যে মশাটাকে দেয়ালে পিষে দিই আমি, সেই আমিই ভাজা মাছটাও চিবিয়ে খাই অতি সাবধানে, ছেলেবেলায় মাছের অন্তঃকংকালজনিত যন্ত্রনায় হোমিওপ্যাথির অভিজ্ঞতা আছে।খিলি পান খেতে গেলে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশের মত লাল-নীল মসলার অংশগুলো বাদ দিয়ে খাই পাছে ক্যন্সার না হয় ভেবে।  খুব বেশি মনে নেই কবে কোথায় শ্রমসাধ্য খেলাধুলা করেছি তবে বসে বসে খেলা যায় দাবা তে নেশা আছে এখনও ভীষণ। হাতে সাবান মাখলে মনে পড়ে সাবানের ফেনায় ফু দিয়ে বেলুন বানাতে পারতাম। ধুলোমাখা একপৃষ্ঠা রোলটানা সাদা পাতা দেখে মনে হয় এখন আর কাগুজে বিমান বানানোর সেই হাত নেই।
কোন বৃষ্টির পর আর জ্বর আসেনা মাঝরাতে, মায়ের নির্ঘুম রাত এখন আমার জন্য নয় নিজের ব্লাড প্রেসার কে ঘিরে জানালা খুলে হাত বাড়িয়ে জোনাকীর নাগাল তো দুরের কথা অন্ধকারকেও ছুঁতে পারিনা প্রবল বৃষ্টিতে কাকভেজা পাখি মনে হয় নিজেকে যখন খবরের কাগজে চোখ বুলাই-অর্থনীতি আজ বিপর্যস্ত-অঞ্জলী দেবীকে কুপিয়ে মেরেছে দুর্বৃত্তরা-অন্যপাতায় বাড়িঘরের সাথে পুড়িয়েছে ইসলাম মিয়ার স্বপ্ন-৬বছরের শিশুকে ধষর্নের রঙিন ছবিও ছাপা থাকে একটু নিচে কোথাও চলে যেতে হবে অতি শীঘ্রই, ল্যম্পপোষ্টের নিচে নির্ঘুম কাটানো অতন্দ্র প্রহরীর গায়ে আজ চাদঁমামা তার ভাগ বসাবে রাত বাড়ছে......বিষন্নতা বাড়ছে....কোন স্বপ্নে মেঘ ছুয়ে দেখেছি যার শুভ্রতা আজো ভাবায় আসলে ওগুলো ধোঁয়াসা ছাড়া আর কিছু নয় সিগারেটের ধোঁয়ার মতো...(৩১-০১-২০১৫খ্রীঃ)