আজ ঈদ, নগরীর ঘরে ঘরে আতংক!
“আজ ঈদ মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দ। পথে পথে শিশুদের কলোরব। দলে দলে লোকজন ঈদগাহে যাচ্ছে। তাদের গায়ে নানান রংয়ের পোষাক। বাতাসে আঁতোরের গন্ধ…………..” বাল্যকালের স্মৃতির পুকুরে ডুব দিয়ে দেখুন না, প্রায় সবাই এই লেখাটি পড়েছিলাম প্রাথমিকের প্রথম শ্রেনীর “আমার বই” নামক বইয়ে। শাওয়ালের প্রথম আকাশের কোণে যখন হাসি মাথা বাঁকা চাঁদ খানা দেখা দিতো তখন হৈ হুল্লোর করে এ বাড়ী ও বাড়ী বলে বেড়াতাম “চাঁদ উঠেছে, চাঁদ উঠেছে”। মা-চাচী রা চেঁচামেচী শুনে বাইরে বেরিয়ে আসতো, তখন রেডিওতে খুব জোরে সাউন্ড দিয়ে ভাইয়া গান শোনাতে আহ্বান করতো “ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ.............”। মায়েরা ব্যস্ত হয়ে পরতেন পিঠা, পায়েশ, স্যমাই রান্না ইত্যাদি আরো কতো কি...!!!! মদিনার সেই আনন্দ লেগে যেতো প্রতি পাড়ায় পাড়ায়। এ ঘর ও ঘর বেড়ানো , রাত জেগে ভোরের প্রত্যাশায় কান খাড়া থাকতো। কখন যে ভোরের আজান হবে আর কার আগে কে গোসল করবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা লেগেই থাকতো। আগে গোসল করতে পারলে সোওয়াব অনেক। কতোবার যে প্রথম হয়েছি, আবার কখনো প্রথম হতে গিয়ে অন্যের ঘারে লাফিয়ে পরেছিলাম পুকুরে তার হিসেব নেই।
কুড়িগ্রামের ঘরে ঘরে ঈদ। এবার মুহররম মাসের ১ তারিখে কুড়িগ্রাম শহরে একটি অন্যরকম ঈদ উদযাপন হতে যাচ্ছে। আজ কাল পরশু এভাবে ক্ষণ গনণা শুরু হয়েছে। পথে পথে নেতাদের কলোরব। দলে দলে লোকজন বলাবলি করছে। তাদের গায়ে শার্টের উপর স্যান্ডোগেঞ্জি, লুঙ্গির উপর আন্ডার অ্যয়ার। বাতাসে প্রেট্রোলের গন্ধ..........শহরের প্রাণ কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে নানান রংয়ের পোস্টার, ঝারবাতি ইত্যাদি। মাইকে জোরে জোরে বাজানো হচ্ছে “..... ময়দানের জনসভায় যোগ দিন, যোগ দিন”। ছোট-বড়-হালকা-ভারী-মাঝারি-নেতারা বিভিন্ন ধরনের সংকুচিত-বর্ধিত সভার ব্যস্তদিন কাটাচ্ছে। কে কার আগে তোড়ন বসায়, কার তোড়ন হেলানো দোলানো নকশা করা, কার ছবি ভাল হয়েছে ইত্যাদি।
কিন্তু “দি উচ্ছেদ পান স্টোর” নামক পান বিক্রেতার ঘুম হারাম। তার এই ঈদ কোন ভাবেই তার ঘরে পৌছাচ্ছে না। করন দেশনেত্রী শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) আগমন উপলক্ষে কুড়িগ্রাম শহরের সাজ সাঝ ভাব থাকলেও এই মহানন্দক্ষণে তাদের দোকান-পাট, ব্যবসাপাতি, হোটেল-মোটেল, এখন বুলডোজার নামক স্যামাই খেয়ে ফেলেছে। খুশি ভাগাভাগি তো দুরের কথা, আজ রাতে তার ঘরে ভাতের হাড়ি উঠবে কিনা তা জানা নেই আমাদের। এই শহরের অধিকাংশ লোকই অতিদরিদ্রসীমার নিচে বাস করে । অভাবী নাগরিকদের কেউ কেউ রাস্তার দুপাশে পরে থাকা পতিত জমি ব্যবহার করে দোকানপত্র নিয়ে বসে দু-চার পয়শা কামাই রোজগার করে খায় বটে। কিন্তু আমাদের তা আর চোখে সইল না। নেত্রী যে রাস্তা দিয়ে যাবেন তার উভয় দিকের অবৈধ স্থাপনা সহ সকল স্থানের অবৈধ স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আগামী কাল আবার নতুন কোন অবৈধ স্থাপনা ভাঙা হবে। এভাবে অভিযান অব্যহত থাকবে। সুতরাং শহরের কিছু কিছু নাগরিকের মনে ঈদ ঈদ ভাব থাকলেও ঐসব উচ্ছেদ নামক পানবিক্রেতার মনে ঈদ পূর্বমুহূর্ত আনন্দ নয় আতংক!
তার পরও শেখ হাসিনার আগমন, শুভ বার্তা বয়ে নিয়ে আসুক কুড়িগ্রাম বাসীর। জয় বাংলা।
ছবিঃ KGM নাহিদ।

No comments:
Post a Comment