Search This Blog

Friday, July 31, 2015

জরায়ুতে বুলেট ! ও অংশীদারী ভূ-খন্ড অধ্যয়ন

জরায়ুতেই থাকতে নাম না জানা শিশু যখন বুলেটের আঘাতে হাসপাতালের আই.সি.ইউ তে তখন একটি আশা জাগানিয়া খবর শুনতে পেলাম আজ রাত ১২:০১মি থেকে বাংলাদেশের দ্বীপায়ণিক রাজ্যে(ছিটমহলের আভিধানিক অর্থ)স্বাধীন সাবর্ভৌম স্বীকৃতির পতাকা উড়বে। জানা যায়, ষোড়শ শতাব্দীতে মোঘল সেনাপতি মীরজুমলা কোচবিহার রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন। এ সময় কোচ রাজা মোঘলদের বশ্যতা স্বীকার করে “কারদ” রাজ্যে পরিনত হয়। সে সময় মোঘল অধিকৃত ১১১টি এলাকার অধিবাসী কোচ রাজার বশ্যতা স্বীকার করে তার রাজ্যের প্রজা হিসেবে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করে ও তার রাজ্যভুক্ত হয়। তখন তাদের বলা হতো রাজগীর। তখন থেকে ঐ এলাকার অধিবাসীগণ রাজগির নামে পরিচিতি লাভ করে। অনুরুপভাবে কোচ রাজ্যভুক্ত ৫৩টি (বর্তমান দহগ্রাম আঙ্গোপোতাসহ) এলাকার অধিবাসী মোঘলদের বশ্যতা স্বীকার করে তাদের অধিকৃত অঞ্চলে সম্পৃক্ত থাকার ইচ্ছা পোষণ করে তারাও ঐ রাজ্যভুক্ত থেকে যায়। ১৯৪৭সালে বাংলা-পাঞ্জাবের সীমারেখা টানার পরিকল্পনা করেন লর্ড মাউন্টবেটন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিটিশ আইরজীবী সিরিল রেডক্লিফকে প্রধান করে সে বছর গঠন করা হয় সীমানা নির্বাচন কমিশন। ১৯৪৭সালে ৮জুলাই লন্ডন থেকে ভারতে আসেন রেডক্লিফ। মাত্র ০৬ সপ্তাহের মাথায় ১৩আগষ্ট তিনি সীমানা নির্ধারনের চুড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এর মাত্র ৩দিন পরেই ১৬আগষ্ট জনসম্মুখে প্রকাশ পায় সীমানার মানচিত্র। কোন রকম সু-বিবেচনা ছাড়াই কমিশনের সদস্যদের নিস্ক্রিয়তা, জমিদার-নবাব, স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও চা বাগান মালিকদের প্রভাবে এধরনের দ্রুত সিদ্ধান্তের জন্য সীমানারেখা নির্ধারণের জটিলতা উত্তরাধিকার সুত্রে বয়ে বেড়াতে হলো যুগের পর যুগ। ইতিহাসের বিবর্তনে উপমহাদেশের বিভক্তি ঘটে। ভারত ও পাকিস্তানের (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান) মানচিত্র তৈরি হয়। ১৯৪৭সালে ১৫আগষ্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করলেও কোচবিহার রাজ্য তাতে অর্ন্তভুক্ত হয়নি। কোচবিহার ছিল রাজ্য শাসিত পৃথক রাজ্য। ১৯৪৯ সালের ১২সেপ্টেম্বর কোচবিহারের রাজা জহদ্বিপেন্দ্র নারায়ণ কোচবিহারকে ভারতের রাষ্ট্রের সঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করে একটি চুক্তি করেন। ১৯৫০সালের ১জানুয়ারী কোচবিহারকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দেরীতে যুক্ত হওয়ায় দেখা গেল কোচ রাজার জমিদারির একাংশ রয়ে গেল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, বিপরীতে পূর্ব পাকিস্তানের কিছু জমিদারদের ভূ-সম্পত্তির কিয়দংশ রয়ে গেলো ভারতের কোচবিহার নামক জেলাতে। এভাবেই জন্ম হলো ছিটমহল নামক বিচিত্র ভূ-খন্ডের।
যা বলতে চেয়েছিলাম, একটি রাষ্ট্রের অংশীদার হয়েও নাগরিকত্ব(গত কাল ৩০জুলাই ২০১৫তে, ৯৪৯জন নিজের ইচ্ছায় ভারতের অধীনে চলে গেছেন ভাগ্য ফেরাতে) পেতে যেখানে ৬৮ বছর লাগলো? স্বাধীকার প্রশ্নকে দুরাতীত মনে হয় এজন্য যে, হয়তো আজ রাত ১২টায় বাজি পুরিয়ে, র‌্যালি করে কিংবা ঘরে ঘরে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে নিজেদের স্ব-অধীনতার বাক্য উচ্চারণ করবে ছিটমহলবাসী। কিন্ত যখন দেখবে আজই এদেশে অতি রাজনৈতিকতার শিকার হয়ে একটি নবজাতক যে কিনা পৃথিবী নামক গ্রহে আসার আগেই মায়ের জরায়ুতেই বুলেটের আঘাতে অপ্রত্যশিত সময়ে ভূমিষ্ট হয়ে ১৭ কোটি মানুষে অভিশাপ দিচ্ছে, সেই দেশের নাগরিক হতে পেরে ৬৮বছর বন্দিত্ব ফেরৎ এই মানুষগুলোর ভাগ্যোন্নয়নে কতোটুকু আর্শীবাদ বয়ে আনবে ৪৪ বছরের পরিনত যুবক বাংলাদেশ? 

তথ্যসুত্র: ব্যবচ্ছেদ এর ৪৫-৪৭পৃষ্ঠা

No comments:

Post a Comment