Search This Blog

Sunday, May 3, 2015

আমাদের প্রজন্ম “অ্যারেন্ঞ্জড ম্যরেজ” নামক অসুস্থচর্চাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাবে

কথাগুলো অভিজ্ঞতা থেকেই…
পরিবারের বিবাহযোগ্যা মেয়েটিকে আজ দেখতে আসবে ছেলেপক্ষ। সকাল থেকেই তার তোড়জোড়। হাতেমুখে উপটান লাগিয়ে মামীর হুকুম মতো বসে থাকতে হয়েছে মেয়েটিকে। ছোটোচাচীর পরামর্শে ঘন্টাখানিক ঘুমিয়েও নিয়েছে। সবার চোখেমুখে চেনা দুশ্চিন্তা, এবার মুখ রক্ষা হবে তো? বাবা-মা মুখে সেরকম কিছু না বললেও ওঁদের অসহায় মুখচোখ দেখে মায়া হবার বদলে, মেয়েটির অভিমান হয়। বরাবরই সে নিরীহ গোছের। মুখ ফুটে নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছার কথা জোর গলায় বলতে শেখেনি। এবার নিয়ে সাতবারের মতো তাকে দাঁড়াতে হবে অনেকগুলো তীক্ষ্ণ চোখের সামনে। যারা যাচাই বাছাইয়ের নামে ভালোমন্দ খেয়ে দেয়ে উঠে যাবার সময় আলগোছে জানাবেন 'পরে জানাচ্ছি।' গতানুগতিকভাবে তাকে আজও হয়ত শুনতে হবে, 'ছবিতে মেয়ের রংটা এতোটা বোঝা যায়নি তো! এসব অবান্তর প্রশ্ন সঙ্গে থাকা তথাকথিত শিক্ষিত পাত্রটির জন্য বাড়তি আনন্দের খোরাক। তার মুখ টিপে হাসতে থাকা, মেয়েটিকে সেরকম আভাস দেয়। ভীষণ ক্লান্ত লাগে মেয়েটির, তাকে ঘিরে এই এক প্রহসন নাটকে। খুব ইচ্ছে করে স্বভাব বিরুদ্ধ আচরণ করে প্রতিবাদ জানাতে। মাটি দু'ভাগ হয়ে সীতাকে অপমানের হাত থেকে রক্ষা করে ছিল প্রকৃতিমাতা। জীবন মিথ না। যে কারণে অভিভাবকের দল পাত্রী দেখবার নাম করে যেমন খুশি অপমান করে যেতে পারেন। যেখানে প্রতিবাদ নেই সেখানে প্রতিকার আশা করা বৃথা। এই শতকেও তাই পাত্রী দেখানোর রীতি লোপাট হয় না আমাদের সমাজ থেকে। হয়ত রেওয়াজে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু আচরণে কমবেশি সবাই নিজের নিজের ইচ্ছের ফর্দ মিলিয়ে নিতে আগ্রহী। বলছিনা একতরফা শুধু মেয়েদেরই বাছ বিচার চলে, ছেলেদের বেলায় এমনটা হয় না। কোথাও কোথাও ছেলেদেরও বাছ বিচার করা হয়। কিন্তু মেয়েদের অপমানের যন্ত্রণার কাছে সেসব নগণ্য। খুব কম পরিবার আছে যাদের মেয়ে/বোনের জীবনে এরকম অসহ্য অপমানজনক ঘটনা নেই। দুঃখের বিষয় নারীত্বের এই অপমানে নারীরাই সঙ্গ দেন যথেষ্ট মাত্রায়। একে অন্যের পছন্দ অপছন্দকে যেখানে সম্মান দেখাবার কথা, সেখানে তাকে অগ্রাহ্য করা বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে যেরকমটা হয় সেটি কী নারীর প্রতি অসম্মানের, অপমানের নয়? আমাদের সমাজবিধির মধ্যে মেয়েদের খাটো করবার চর্চা চলে এসেছে বলে আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে একজন শিক্ষিত পুরুষের তাকে প্রতিবাদহীন মেনে নেয়াটা তো শুধু নারীরই অপমান না পুরুষটির জন্যেও অপমানের, তার শিক্ষাদীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় এমন আচরণে। যে মেয়েটি শিক্ষিত হবার স্বপ্ন উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছে তাকে কেন অন্যের চিন্তার খোপে নিজেকে মানিয়ে নেবার আপোষ করতে হবে? আমার স্বপ্ন কেমন হবে সেটা অন্য একজন ঠিক করে দেবার কে? আমার নামের ব্যবচ্ছেদের স্বাধীনতাই বা অন্যের ইচ্ছা মাফিক কেন হতে হবে? কেন আমাকে অন্যের পোশাকে সাজতে হবে? অন্যের বাড়িয়ে দেয়া থালায় কেন আমি সোনামুখ করে খাবো? একজন ভিখিরিরও একটা নিজস্ব থালা থাকে। যুগ পালটেছে কিন্তু আমাদের আচরণ পালটানোর কোনো লক্ষণ নেই। অপমান মুখ বুঁজে সহ্য করে আমাদের অগ্রজেরা সংসার জীবন নামের মায়ায় নিজেদের জুড়ে দিলেও একুশ শতকে দাঁড়িয়ে আপনি কিংবা আমি কেনো তেমনটা মুখ বুঁজে সয়ে নেবো? মেয়ে দেখানোর নামে সমাজে চলতে থাকা নারীত্বের অপমান করার সভায় শিক্ষিত রুচিশীল পুরুষদের সবাইকে না হলেও একটা বড় অংশকে প্রতিবাদের ভূমিকায় দেখতে চাই। হোক প্রতিবাদ। প্রতিবাদ যেখানে, সুন্দর প্রতিকার সেখানে আলো হাতে এসে দাঁড়ায়। কনে দেখার এই অপসংস্কৃতিকে রুখে দিতে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের শক্ত অবস্থান থাকা চাই। বাধ্য হয়ে অপসংস্কৃতির ঢলে গা ভাসিয়ে দিয়ে এসব অনাচার মেনে নেয়াটা শুধু আপোষকামিতা নয়, এটা চরম কাপুরুষত্বেরও লক্ষণ। আমি জানি আজকাল অনেক ছেলে বেরিয়ে এসেছেন ওই কুসংস্কৃতি থেকে এবং একটা মেয়ের পছন্দ অপছন্দকে সম্মান দেখিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করতে শুরু করেছেন। কিন্তু তার সংখ্যা অতি নগণ্য। এখনো মধ্যযুগীয় সামন্ত মানসিকতা বিরাজ করছে অধিকাংশ পুরুষের মনে।পুরুষেরা যদি প্রচলিত এই কুসংস্কৃতিকে দৃঢ়ভাবে ‘না’ বলতে পারেন তাহলে সমাজ চলমান এই সংস্কৃতিকে বদলাতে বাধ্য হবে। সুতরাং পুরুষকেই এগিয়ে আসতে হবে নারীদের পাশাপাশি। বিয়ে হলো একটি যৌথজীবনের সূচনা। বিয়ের সংস্কৃতিতে নারী পুরুষের সমন্বিত সভ্য সহাবস্থান পরিবারের বাকী জীবনের জন্যও বিশেষ প্রয়োজনীয়। আসুন কুসংস্কৃতি বর্জন করে আলোর পথের যুথবদ্ধ যাত্রী হই। যখন স্কুলে পড়তাম, তখন আমার বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসতো এরকম(উদাঃ খালু উপসচিবের জামাই, প্রপিতামহ সাবেক চেয়ারম্যান এবং তার ভাই ছিলেন বৃটিশ আমলের জজ কোর্টের পেশকার, বোনের শশুর সেই কালে নায়েব গোমস্তা ছিলেন ইত্যাদি) এসব আমার বোনের বা হবু বোন জামাইয়ের কোন উপকারে আসাবে কি না তা জানা ছিল না। আসলে আমাদের সমাজে দুজন ব্যক্তির মধ্যে বিয়ে হয় না হয় দুটি পরিবারের মধ্যে, দুটি গোষ্ঠির মধ্যে। পরিবার কে খুশি করার জন্য দুজন মানুষ হয়তো সুখের ভান করে সারাজীবন কাটিয়ে দেয় অসুখি সর্ম্পকের বেড়াজালে, আমাদের প্রজন্ম এভাবে “অ্যারেন্ঞ্জড ম্যারেজ”নামক অসুস্থচর্চাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাবে এটাই প্রত্যাশা করি কিন্তু তার পরও এই চর্চাকে আমরা ধরে রাখি………….

No comments:

Post a Comment