Search This Blog

Monday, May 18, 2015

আরবিতে নাম না রাখা এখন পাপ ! আরবিতে নাম না রাখা এখন অধর্ম !

অনেক দিন ধরেই খেয়াল করে দেখলাম আশেপাশে বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী, আত্নীয়স্বজন তাদের ছেলেমেয়েদের খুব অদ্ভুত অচেনা শব্দযুক্ত নাম রাখছে, নির্দিষ্ট করে বললে আরবি শব্দের নাম রাখছে। আরবির প্রতি আমার কোন ঘৃনা বা অশ্রদ্ধা নেই, কিন্তু হিব্রু যেমন আমি বুঝি না, তেমনি আরবিও আমি বুঝি না। তাই ছেলেমেয়েদের এই নাম রাখার সংস্কৃতি আমার কাছে খুবই অদ্ভুত লাগে। নাম বাংলায় না রেখে কেনো আরবিতে রাখা হচ্ছে সেটাতে অবাক হবার বিষয়।
আগের জেনারেশনে কিছুটা হলেও একটু ধর্মান্ধ ছিলো; কারো নাম যেমন আমিন, ওমর, রোকসানা, শাহজাহান, আকবর, সিরাজ, সাবেরা ইত্যাদি হত তেমনি সাগর, নীলা, রাত্রি, আকাশ, শুভ্র, লিসা, মারিয়া, সানি, পান্না, মনি, দূর্জয় ইত্যাদিও হত। কিন্তু এখন ব্যাপারটা আর সেই পর্যায়ে নাই, ছেলেমেয়ের নাম একমাত্র আরবিতেই হতে হবে, খুব সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।
তারপর একটা সময় আসলো যখন নিজের ভাস্তির নাম রাখার উপলক্ষ হলো। আমি খুবই আনন্দিত হয়ে ভাবলাম যাক একটা সুন্দর বাংলা নাম রাখবো এবং রাখলাম “অবন্তী”এর অর্থ উজ্জয়ীনি। কিন্তু তখন বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা এত সহজ না। বাংলা নামটা আমার বড় ভাইয়ার কাছে তেমন একটা পছন্দ হয়নি। আরবিতে নাম না রাখা এখন পাপ। আরবিতে নাম না রাখা এখন অধর্ম।
মুসলমানদের আরবী-ফার্সি নাম রাখার ব্যপারেও অনেক সুক্ষ্ণ নিয়ম আছে। আমাদের পরিচিত একজন বলেছিলেন “শাহজাহান” “শাহআলম” “আলমগীর” “জাহাঙ্গীর” এই চারটি নামের অর্থই “পৃথিবীর সম্রাট”। যেহেতু কোরআন অনুযায়ী পৃথিবীর সম্রাট একমাত্র আল্লাহ, মানুষ কখনো এটির দাবী করতে পারেনা, সেহেতু এই নামগুলি নাকি মুসলমানদের রাখা উচিৎ না। এমনকি আল্লাহর ৯৯টি নাম থেকে যদি কেউ কারো নামকরণ করতে চায়, তাহলে সেই নামের আগে অবস্যেই “আব্দুল” লাগাতে হবে।
বাংলা নাম রাখার জন্য আমাকে মা, ভাইয়া, পাড়া প্রতিবেশীর মতের বিরুদ্ধে যেতে হয়েছে; অনেককে বুঝাতে হয়েছে যে বাংলা নাম রাখাটাই স্বাভাবিক, আরবিতে নাম রাখার কোন যুক্তি নাই। এমনকি শেষ পর্যন্ত এটাও বলতে হয়েছে যে হাদিস মতে মেয়ের নাম রাখার অধিকার বাবার। কিন্তু এমনটা তো বাংলাদেশে হবার কথা ছিলো না! এটা দুঃখজনক। ছোট ব্যাপার হলেও, এটাও এক ধরনের ধর্মান্ধতা।
খুব বিস্তারিত লিখতে চাই না, কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলতে চাই বাংলায় নাম রাখলে সেটা ধর্মবিরোধী না, বরং সেটাই ইসলামকে সর্বজনীন ধর্ম হিসাবে আরো বেশি প্রতিষ্ঠিত করে। যারা কুরান হাদিস ঘাটাঘাটি করে, বাংলায় নাম রাখলে পাপ হবে না বলে তারা বলেছেন। তাই ছোট্ট একটা অনুরোধ, ছেলেমেয়ের নাম বাংলায় রাখুন, অন্তত ডাক নামটা বাংলায় রাখুন। কারন আমাদের ছোট ছোট ধর্মান্ধতাই সমাজকে সাম্প্রদায়িক করে তুলছে।

Monday, May 4, 2015

আমার “এই যে....”

……….সারা রাত ঘুমোতে পারিনি একবারও
বিছানায় শুয়ে-বসে এপাশ ওপাশ করে কাটিয়েছি সারাক্ষণ

মাঝে মাঝে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অস্থির হয়ে বলেছি
কটা বাজে এখন?
মাথার ওপর সেলিং ফ্যানটা অবিরাম ঘট্ ঘট্ করে ঘুরেছিল
নিঃস্তব্দ রাতে অনেক কিছুই ভাববার ছিল

মাঝে মাঝে অন্ধকারকে জিজ্ঞেস করেছি
তার সাথে কথা বলে নিচ্ছি সহজ ভাষায়
তোমার ক্ষুদে বার্তার জবাব কি দিব তা আসছেনা মাথায়

কেউ যেন অন্ধকারে নিঃসঙ্কোচে প্রশ্ন করলো আমায়
বলতে পারো?
কতোটা কাছে আসালে তাকে ভালোলাগা বলতে পারা যায়?
আমি বললেম হুম বিলক্ষণ পারি;
এ আর কি এমন!
গল্পে গল্পে সময় ছাপিয়ে সারাক্ষণ
কখনো লাল-কালোর দ্বন্দ পাকিয়ে-
শেষ বিকেলে দাবা খেলে-
সন্ধারাগে ছেলেমানুষি ঝগড়া হলে-
ঝগড়া শেষে রাগ ভাঙানোর অভিমানে-আপোষে-
যদি বলতে পারি ভালো থেকো যত্নে রেখো;
যদি বলতে পারি আমার হাতে গড়া এ পাহাড়ে এসে-
তোমার সেই চেনা চুড়ায় বসে ভাবো একবার
তোমাতে আমায় মিলে ছোট্ট গুটিসুটি এক পরিবার
আর আমার ছেলেপুলো গুলোকে
ভালো থেকো যত্নে রেখো;


(২৬ এপ্রিল ২০১৪খ্রি: তে মুঠোফোনে কথোপোকথনে, আসলে তখন লেখাগুলো ওই আমাকে সংরক্ষন করতে বারণ করেছিল, আজ হঠাৎ ফোনটা চাপতে চাপতেই বেড়িয়ে পরলো, শুরুতেই ফাঁকা জায়গায় তাঁর নামটা ছিল) 

Sunday, May 3, 2015

আমাদের প্রজন্ম “অ্যারেন্ঞ্জড ম্যরেজ” নামক অসুস্থচর্চাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাবে

কথাগুলো অভিজ্ঞতা থেকেই…
পরিবারের বিবাহযোগ্যা মেয়েটিকে আজ দেখতে আসবে ছেলেপক্ষ। সকাল থেকেই তার তোড়জোড়। হাতেমুখে উপটান লাগিয়ে মামীর হুকুম মতো বসে থাকতে হয়েছে মেয়েটিকে। ছোটোচাচীর পরামর্শে ঘন্টাখানিক ঘুমিয়েও নিয়েছে। সবার চোখেমুখে চেনা দুশ্চিন্তা, এবার মুখ রক্ষা হবে তো? বাবা-মা মুখে সেরকম কিছু না বললেও ওঁদের অসহায় মুখচোখ দেখে মায়া হবার বদলে, মেয়েটির অভিমান হয়। বরাবরই সে নিরীহ গোছের। মুখ ফুটে নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছার কথা জোর গলায় বলতে শেখেনি। এবার নিয়ে সাতবারের মতো তাকে দাঁড়াতে হবে অনেকগুলো তীক্ষ্ণ চোখের সামনে। যারা যাচাই বাছাইয়ের নামে ভালোমন্দ খেয়ে দেয়ে উঠে যাবার সময় আলগোছে জানাবেন 'পরে জানাচ্ছি।' গতানুগতিকভাবে তাকে আজও হয়ত শুনতে হবে, 'ছবিতে মেয়ের রংটা এতোটা বোঝা যায়নি তো! এসব অবান্তর প্রশ্ন সঙ্গে থাকা তথাকথিত শিক্ষিত পাত্রটির জন্য বাড়তি আনন্দের খোরাক। তার মুখ টিপে হাসতে থাকা, মেয়েটিকে সেরকম আভাস দেয়। ভীষণ ক্লান্ত লাগে মেয়েটির, তাকে ঘিরে এই এক প্রহসন নাটকে। খুব ইচ্ছে করে স্বভাব বিরুদ্ধ আচরণ করে প্রতিবাদ জানাতে। মাটি দু'ভাগ হয়ে সীতাকে অপমানের হাত থেকে রক্ষা করে ছিল প্রকৃতিমাতা। জীবন মিথ না। যে কারণে অভিভাবকের দল পাত্রী দেখবার নাম করে যেমন খুশি অপমান করে যেতে পারেন। যেখানে প্রতিবাদ নেই সেখানে প্রতিকার আশা করা বৃথা। এই শতকেও তাই পাত্রী দেখানোর রীতি লোপাট হয় না আমাদের সমাজ থেকে। হয়ত রেওয়াজে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু আচরণে কমবেশি সবাই নিজের নিজের ইচ্ছের ফর্দ মিলিয়ে নিতে আগ্রহী। বলছিনা একতরফা শুধু মেয়েদেরই বাছ বিচার চলে, ছেলেদের বেলায় এমনটা হয় না। কোথাও কোথাও ছেলেদেরও বাছ বিচার করা হয়। কিন্তু মেয়েদের অপমানের যন্ত্রণার কাছে সেসব নগণ্য। খুব কম পরিবার আছে যাদের মেয়ে/বোনের জীবনে এরকম অসহ্য অপমানজনক ঘটনা নেই। দুঃখের বিষয় নারীত্বের এই অপমানে নারীরাই সঙ্গ দেন যথেষ্ট মাত্রায়। একে অন্যের পছন্দ অপছন্দকে যেখানে সম্মান দেখাবার কথা, সেখানে তাকে অগ্রাহ্য করা বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে যেরকমটা হয় সেটি কী নারীর প্রতি অসম্মানের, অপমানের নয়? আমাদের সমাজবিধির মধ্যে মেয়েদের খাটো করবার চর্চা চলে এসেছে বলে আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে একজন শিক্ষিত পুরুষের তাকে প্রতিবাদহীন মেনে নেয়াটা তো শুধু নারীরই অপমান না পুরুষটির জন্যেও অপমানের, তার শিক্ষাদীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় এমন আচরণে। যে মেয়েটি শিক্ষিত হবার স্বপ্ন উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছে তাকে কেন অন্যের চিন্তার খোপে নিজেকে মানিয়ে নেবার আপোষ করতে হবে? আমার স্বপ্ন কেমন হবে সেটা অন্য একজন ঠিক করে দেবার কে? আমার নামের ব্যবচ্ছেদের স্বাধীনতাই বা অন্যের ইচ্ছা মাফিক কেন হতে হবে? কেন আমাকে অন্যের পোশাকে সাজতে হবে? অন্যের বাড়িয়ে দেয়া থালায় কেন আমি সোনামুখ করে খাবো? একজন ভিখিরিরও একটা নিজস্ব থালা থাকে। যুগ পালটেছে কিন্তু আমাদের আচরণ পালটানোর কোনো লক্ষণ নেই। অপমান মুখ বুঁজে সহ্য করে আমাদের অগ্রজেরা সংসার জীবন নামের মায়ায় নিজেদের জুড়ে দিলেও একুশ শতকে দাঁড়িয়ে আপনি কিংবা আমি কেনো তেমনটা মুখ বুঁজে সয়ে নেবো? মেয়ে দেখানোর নামে সমাজে চলতে থাকা নারীত্বের অপমান করার সভায় শিক্ষিত রুচিশীল পুরুষদের সবাইকে না হলেও একটা বড় অংশকে প্রতিবাদের ভূমিকায় দেখতে চাই। হোক প্রতিবাদ। প্রতিবাদ যেখানে, সুন্দর প্রতিকার সেখানে আলো হাতে এসে দাঁড়ায়। কনে দেখার এই অপসংস্কৃতিকে রুখে দিতে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের শক্ত অবস্থান থাকা চাই। বাধ্য হয়ে অপসংস্কৃতির ঢলে গা ভাসিয়ে দিয়ে এসব অনাচার মেনে নেয়াটা শুধু আপোষকামিতা নয়, এটা চরম কাপুরুষত্বেরও লক্ষণ। আমি জানি আজকাল অনেক ছেলে বেরিয়ে এসেছেন ওই কুসংস্কৃতি থেকে এবং একটা মেয়ের পছন্দ অপছন্দকে সম্মান দেখিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করতে শুরু করেছেন। কিন্তু তার সংখ্যা অতি নগণ্য। এখনো মধ্যযুগীয় সামন্ত মানসিকতা বিরাজ করছে অধিকাংশ পুরুষের মনে।পুরুষেরা যদি প্রচলিত এই কুসংস্কৃতিকে দৃঢ়ভাবে ‘না’ বলতে পারেন তাহলে সমাজ চলমান এই সংস্কৃতিকে বদলাতে বাধ্য হবে। সুতরাং পুরুষকেই এগিয়ে আসতে হবে নারীদের পাশাপাশি। বিয়ে হলো একটি যৌথজীবনের সূচনা। বিয়ের সংস্কৃতিতে নারী পুরুষের সমন্বিত সভ্য সহাবস্থান পরিবারের বাকী জীবনের জন্যও বিশেষ প্রয়োজনীয়। আসুন কুসংস্কৃতি বর্জন করে আলোর পথের যুথবদ্ধ যাত্রী হই। যখন স্কুলে পড়তাম, তখন আমার বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসতো এরকম(উদাঃ খালু উপসচিবের জামাই, প্রপিতামহ সাবেক চেয়ারম্যান এবং তার ভাই ছিলেন বৃটিশ আমলের জজ কোর্টের পেশকার, বোনের শশুর সেই কালে নায়েব গোমস্তা ছিলেন ইত্যাদি) এসব আমার বোনের বা হবু বোন জামাইয়ের কোন উপকারে আসাবে কি না তা জানা ছিল না। আসলে আমাদের সমাজে দুজন ব্যক্তির মধ্যে বিয়ে হয় না হয় দুটি পরিবারের মধ্যে, দুটি গোষ্ঠির মধ্যে। পরিবার কে খুশি করার জন্য দুজন মানুষ হয়তো সুখের ভান করে সারাজীবন কাটিয়ে দেয় অসুখি সর্ম্পকের বেড়াজালে, আমাদের প্রজন্ম এভাবে “অ্যারেন্ঞ্জড ম্যারেজ”নামক অসুস্থচর্চাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাবে এটাই প্রত্যাশা করি কিন্তু তার পরও এই চর্চাকে আমরা ধরে রাখি………….