কুড়িগ্রাম আর একটু কুড়িগ্রাম হয়ে উঠুক…
সত্য কথাই তেঁতো আর অসুন্দর সদা অসত্য, অন্যায়। শ্যাখ সাহেবের বেটি আসছেন এ শহরে, সাজ সাজ রব চারিদিকে, অসমান রাস্তা সমান হলো, যে রাস্তায় শুভ্র শরতের ধূলো উড়তো সকাল বিকেল, সে রাজপথ বিটুমিনাসের তীব্র ঝাঝালো গন্ধের দখলে। তেলের খনির ইজারা দেয়া হয়েছে ডাইরক্যা পুটিদের, যাদেরকে লুঙ্গির উপর জাঙ্গিয়া কিংবা শার্টের উপর স্যন্ডোগ্যঞ্জি পড়তে দেখা যেতো হরহামেশাই। রং বে-রংয়ের ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ড এর ব্যবসা জমজমাট। জাখলা সাহেব নৌকা বানাতে দিব্যি হম্বিদম্বি অবস্থা, এই রাজস্ব-ঐ- জেলারেল কর্মকর্তা বলছেন না না আর একটু বৈঠাটা বড় করলে ভাল লাগবে, হাজার হোক একটা মহাপ্লাবন হতে যাচ্ছে তো এই শহরে। মাথার উপর দু-একবার হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যাচ্ছে।চার স্তরের সিপাহশালারা উপস্থিত যদি কোন পিঁপড়ে বা উঁইপোকা আবার নৌকার তলায় ফুটো করে। যে খেলার মাঠ গরু-ছাগলের দখলে ছিল তা এখন লাল ফাস্টক্লাস ইটের প্রলেপে ঢাকা। যে ফুটপাত নিম্নবিত্তের নিউমার্কেট ছিল তা এখন চুনোপুটিদের তোড়নের ভারে ২.৫ ইঞ্চি দেবে গ্যাছে। শ্যওলা ধরা পুকুর পাড়ে এখন ফাস্টফুডের দোকান বসেছে। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাড়িঁয়ে থাকা অট্টালিকা গুলো এখন রুচিশীল মনের বার্জার প্লাস্টিক পেইন্ট দিয়ে ঢেকে দেয়া হচ্ছে। দলের পেছরের সারিতে থাকা নেতারা এখন গিজগিজ করছে নৌকার আসেপাশে। আজ বিকেলে এই সব অভিজ্ঞতা নিয়ে বাসায় এসেই ভাবনার খাতায় বেখেয়ালী কলম চালালো ছেলেটা। কিছু প্রশ্ন বার বার ধোঁয়া তুলছিল ছেলেটার মস্তিষ্কে। আসলে কি এই? নাহ! শুধুমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় যেদিক দিয়ে তার গাড়ি বহর নিয়ে যাবেন সেইটুকু অংশই এরকম চাকচিক্যময় করে তোলা হয়েছে। তাহলে তিনি কি দেখবেন? এ অঞ্চলের মানুষের কমতি কিসের? রাস্তাঘাট তো বেশ ভালই আছে নাকি? তাহলে কিসের আবার দাবি দাওয়া? কুড়িগ্রামের আসল অবস্থা গুলো প্রধানমন্ত্রী জানেন? নাগেশ্বরী-ভুঃঙ্গামারী সড়কের বেহাল দশার কথা জানেন? ভাঙনের ফলে চরাঞ্চলের জীবন জীবিকার কথা জনেন? বেকারদের মনের কথা জানেন? এইটুকু লিখেই ঘুমোতে গেল ছেলেটা। অত:পর ঘুমের মধ্যে একখানা মাইথলজিক্যাল ড্রিম দেখলো ছেলেটা।
“একদা এক দেবদূত এক নগরীর উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল, সহসা তিনি কি মনে করে জানি তার বাহন থামিয়ে নেমে আসলেন নগরীতে। নগরীর খেটে খাওয়াদের দল, ইট ভাঙা মাথার দল, পেপার বিক্রেতার দল, ভীক্ষুকের দল, এতীম অনাথের দল, পুষ্টিহীনদের দল, নদী ভাঙাদের দল, দ্বীপ চরের দল, বন্যার্তদের দল, ফসলহারা কৃষকদের দল, রিক্সাওয়ালাদের দল, ভুক্তভোগীদের দল, বেকারদের দল, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দল, কয়লা ব্যবসায়ীদের দল, বালুশ্রমিকের দল, শিক্ষিত বেকারদের দল সেই সাথে কাক পক্ষির দলও প্রত্যেকেই তাদের মনের কথা গুলো দেবদূতকে বললো। দেবদূতের মনে গভীর দয়ার উদ্রেগ হলো, তিনি নগরীর দূরাবস্থার কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে বর দিলেন:
নগরীর কেন্দ্রে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নগরী থেকে দূরে দুর্গম চরাঞ্চলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার ভবন, বিচারালয়, রেল যোগাযোগ, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্র, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি। দরদী দেবদূত এই সকল উপহার দিয়ে নগরবাসীর কাছ থেকে বিদায় নিলেন”।
ছেলেটা সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার সময় দেখল মোটর বাইকে তেল নেই। অগত্যায় রিক্সায় উঠে জনৈক ব্যক্তির কন্ঠে “মাজে মইধ্যে এ্যংকরি দুই একজন করি নেতা-কোতা আইসলে তো ভালই হইল হয়, আর যাই হোক রাস্তাঘাট গুল্যা ভালই হয়্যা গেইল বাহে এলা” শুনতে শুনতে অফিসের দিকে চলে গেলো। জয় হোক স্বপ্নের, সফল হোক জননেত্রীর আগমন।

